খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন ও তার স্বামীর পাসপোর্টের আবেদন স্থগিত
  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার
কাজ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন স্থান ক্ষতিগ্রস্ত

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক নির্মাণ কাজ তদারকিতে প্রকৌশলী জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করা ও সওজ এর সঠিক তদারকি না থাকায় নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দায় এড়াতে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানেও দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর দায়িত্ব এড়িয়ে ঠিকাদারের পক্ষেই সাফাই গাচ্ছেন সরকারের পক্ষে কাজ বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা।

প্রসঙ্গতঃ সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাগেরহাটের মেসার্স মোজহার এন্টারপ্রাইজ। সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের সাতক্ষীরা অংশের ২০ কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় একশ’ কোটি টাকা। সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) তত্ত্ববধানে এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় ২০১৮ সালের ১২ মার্চ থেকে। ২০২০ সালের ২০ মে এই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ-১ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা সহকারি প্রকৌশলী মোঃ জিয়াউদ্দিন ২০১৯ সাল থেকে কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই সড়কের নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে তালা উপজেলাধীন পাটকেলঘাটা বলফিল্ড ও এর আশ পাশের এলাকায় কয়েকটি স্থানে পৃথকভাবে প্রায় ৭০০ মিটার এলাকা জুড়ে সড়ক ডেবে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি প্রথম দিকে সওজ অথবা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নজরে আসেনি।



সম্প্রতি এই সড়কের দুরাবস্থার দুটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে ও মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলে টনক নড়ে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তারা দ্রুত এই ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংষ্কারে উদোগ নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাটকেলঘাটা এলাকার একজন ব্যবসায়ী জানান, শুরু থেকেই খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের নির্মাণ কাজে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। এখানে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সঠিক তদারকি ছিল না। ঠিকাদার তার ইচ্ছামত দায়সারা ভাবে কাজ করে চলে গেছেন। একই সাথে নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিন্মমানের সামগ্রী। পাটকেলঘাটা এলাকায় সড়ক নির্মাণ কাজ করার সময় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি অনিয়মের প্রতিবাদ করলে সেখানে দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির নাম বলে তাদের ভয় দেখান। ওই ব্যক্তিদের নাম শুনে কেউ আর সড়কের ধারে কাছে যেত না। এছাড়া সওজ কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি না থাকায় ঠিকাদারের লোকজন তাদের ইচ্ছামত তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করে চলে গেছেন বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ-১ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা সহকারি প্রকৌশলী মোঃ জিয়াউদ্দিন বলেন, সদ্য নির্মিত এই সড়কের লোড ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত লোডের গাড়ি চলাচলের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নকশা অনুযায়ী সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের লোড ধারণ ক্ষমতা মাত্র ২৪ টন। কিন্তু এই সড়কের উপর দিয়ে মালামালসহ ট্রাক চলাচল করে ৭০ থেকে ৭৫ টনের। নকশা অনুযায়ী ৭০ থেকে ৭৫ টনের ধারণ ক্ষমতা এই সড়কের নেই। যে কারনে এই সড়কে ড্যামেজ দেখা দিচ্ছে। তবে বিষয়টি সওজ এর প্রধান কার্যালয়ের ডিজাইন সেকশনে লিখে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে ওয়াটার লেভের হাই হওয়ায় পানি জমে সড়কের সাব গ্রেড নষ্ট হয়ে গেছে। সড়ক নির্মাণে ৩ বছর মেয়াদ আছে। যতবার নষ্ট হবে ততবার ঠিকাদার নিজের খরচে সেটা মেরামত করবেন। সরকারের কোন টাকা খরচ হবে না। সড়কটি নির্মাণাধীন আছে। ঠিকাদার কাজ শেষ করার জন্য আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। এই মূহুর্তে ড্যামেজ হওয়ায় দ্রুত সংষ্কারের সুযোগ রয়েছে।



তবে সাতক্ষীরার স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিমত, প্রকৌশলীরা নিজেদের দায় এড়িয়ে ঠিকাদারের পক্ষে যে যুক্তিই দেখান না কেন তার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। কারণ যেখানে রাস্তা ড্যামেজ হয়েছে তার আশে পাশে পানির লেভেল রাস্তার চেয়ে বেশ নিচে। তাছাড়া ওভারলোডের গাড়ি চলাচলের কারণেই যদি এটা হবে তাহলে খুলনা থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত রাস্তা পুরাটাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা। মূলত: ডিজাইন অনুযায়ী কাজ না হওয়া ও প্রকৌশলীদের সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবেই রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ড্যামেজ হয়েছে বলে তাদের ধারণা। এব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়িত্বে গাফিলতি ও ঠিকাদারের কাছ থেকে সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, খুলনা- সাতক্ষীরা মহাসড়ক নির্মাণ কাজে সরকারি দায়িত্ব পালনে গাফিলতি থাকলেও খুলনার আটরা শিল্পাঞ্চলে পৈত্রিক জমিতে প্রকৌশলী মো: জিয়াউদ্দিন গড়ে তুলেছেন বিশাল ভবন। সেখানে ইমারত নির্মাণ আইন ভঙ্গ করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র অনুমতি ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি কেডিএ’র গোচরিভূত হওয়ার পর অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ এবং শোকজ করা হয়েছে তাকে।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!