খুলনা মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্যের আহবায়ক কমিটিতে স্থান হয়নি নগরের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং পাঁচ থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। মঙ্গলবার (০১ মার্চ) কেন্দ্র থেকে খুলনা মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। ঘোষিত ৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে দলের জৈষ্ঠ্য এসব নেতাদের কমিটিতে না রাখায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তবে মহানগর বিএনপির কমিটিতে স্থান পেয়েছে কিছু নতুন মুখের।
দলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির ৩ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান মনি সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি পূনঃমূল্যায়নের দাবি জানান। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে শোকজ এবং দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে নগর বিএনপির আওতাধীন পাঁচ থানা ও বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায় থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা পদত্যাগ করেন।
এদিকে ২৫ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির প্রথম সাংগঠনিক সভায় পাঁচ থানা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিগুলোর মধ্যে খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন মীর কায়সেদ আলী, দৌলতপুর থানা কমিটির সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক নান্নু, খালিশপুর থানা কমিটির সভাপতি এড. ফজলে হালিম লিটন, সাধারণ সম্পাদক এসএম আরিফুর রহমান মিঠু, সোনাডাঙ্গা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল হোসেন খোকন, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ, সদরের সভাপতি আব্দুল জলিল খান কালাম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু। সদ্য ঘোষিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে এই পাঁচ থানা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কেউ স্থান পায়নি।
কমিটিতে নেই মহানগর বিলুপ্ত কমিটির বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনি, সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল খান কালাম, এড. বজলুর রহমান, এড. এসআর ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, মাহবুব কায়সার, সহ-প্রচার সম্পাদক কেএম হুমায়ুন কবির, দপ্তর সম্পাদক মহিবুজ্জামান কচি, সহ-দপ্তর সম্পাদক শামসুজ্জামান চঞ্চলসহ সাবেক দায়িত্বশীল অনেক নেতা।
নগর বিএনপির ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এসএম শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব হিসেবে নগর বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।
কমিটির বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক পদে আছেন- নগর বিএনপির সাবেক নেতা তরিকুল ইসলাম জহির, কাজী মোঃ রাশেদ, নগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি স. ম. আ রহমান ও সৈয়দা রেহেনা ইসা, অ্যাডভোকেট নুরুল হাসান রুবা, কাজী মাহমুদ আলী, নগর বিএনপির সাবেক স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হাসান দুলু, সাবেক সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক শের আলম সান্টু, সাবেক নেতা আবুল কালাম জিয়া, বদরুল আনাম খান, নগর যুবদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি একরামুল হক হেলাল, বিএনপি নেতা মাসুদ পারভেজ বাবু, শেখ সাদি ও হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ।
সদস্য হিসেবে আছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুলনা-৩ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল। এছাড়া সদস্য রয়েছেন নগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, বিএনপি নেতা জালাল শরিফ, শেখ জাহিদুল ইসলাম, আ. রাজ্জাক, হাফিজুর রহমান মনি, আশফাকুল রহমান কাকন, ওয়াহিদুর রহমান দিপু, বেগ তানভিরুল আজম, সাহিনুল ইসলাম পাখি, রুবায়েত হোসেন বাবু, মুরশিদ কামাল, আরিফ ইমতিয়াজ খান তুহিন, এ্যাড. মাসুম রশিদ, হুমায়ন কবির, বিপ্লবুর রহমান কুদ্দুস, সাজ্জাদ হোসেন তোতন, সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ, কাজী মিজানুর রহমান, এহতেশামুল হক শাওন, এ্যাড. চৌধুরী তৌহিদুর রহমান তুষার, একরামুল হক মিল্টন, জহর মীর, উদ্দিন নান্নু, শেখ ইমাম হোসেন, হাবিব বিশ্বাস, আহসান উল্লাহ বুলবুল, এড. মোঃ আলী বাবু, তারিকুল ইসলাম, শরিফুল আনাম, শেখ জামাল উদ্দিন, মোঃ আব্দুল হালিম, আবু সাইদ হাওলাদার আব্বাস, আফসার উদ্দিন, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, আনসার আলী, নাসির খান, আব্দুস সালাম, আলমগীর হোসেন, কাজী শাহ নেওয়াজ নিরু, আব্দুর রহমান ডিনো, নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর, ফারুক হোসেন হিলটন, তারিকুল ইসলাম, খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, জাহিদ হোসেন, মিজানুর রহমান মিল্টন, শফিকুল ইসলাম শফি, আক্কাস আলী, ফারুক হোসেন, মুজিবর রহমান, আজিজা খানম এলিজা ও মাসুদ খান বাদল।
মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, ৭১ জনের এ কমিটি দেখে নতুন করে বলার কিছু নেই। এটা একটা সিন্ডিকেটের প্রকৃতঅর্থে ব্যক্তিবিশেষের একক আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টা। এতে করে খুলনায় বিএনপি তার অতীত ঐতিহ্য হারাবে ও দল একটি ক্ষয়িস্নু শক্তিতে রুপান্তরিত হবে। অদুর ভবিষ্যতে নির্বাচনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। গত ১৩/১৪ বছরে কয়েক ডজন মামলার স্বীকার হয়েছি, কয়েক দফায় জেলে থাকার ৮/৯ মাস বাদে মাঠের রাজনীতিতে নেতৃত্বে আমার কোন গ্যাপ তো নেই। দেখবো, অপেক্ষা করবো। এর আগেও এধরণের অবাঞ্চিত অপতৎপরতা দেখেছি। এসব অনাকাঙ্খিত লোকদের বাহাদুরী এরও ইতি আছে। রাজনীতিতে মাঠ ছাড়ছি না।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, ৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এটা আহ্বায়ক কমিটি। এই কমিটি সম্মেলনের আয়োজন করবে।
নগরের পাঁচ থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কমিটিতে স্থান না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা পদত্যাগ করেছেন। নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি মানেনি। যারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘোষিত কমিটি মানে না, তাদেরকে আমরা কমিটিতে রাখবো কোন হিসেবে ? আমরা দফায় দফায় নেতাদের বাড়ি গিয়েছি, কথা বলেছি, কর্মসূচির দাওয়াত দিয়েছি। আসার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তারা আসেনি। তব্ওু এটি একটি আহ্বায়ক কমিটি। সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। আমরা তাদেরকে ওয়েলকাম করি, তারা আসুক। কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।