খুলনা মহানগর বিএনপি’র চলমান কমিটির যুগপূর্তি আগামী ২৫ নভেম্বর। এসময়ের মধ্যে দলটির জেলা শাখায় দু’বার সম্মেলন হলেও নতুন নেতৃত্ব আসেনি নগরে। ফলে পদ বঞ্চিত, নিষ্ক্রীয়, অবমূল্যায়নে দল ত্যাগের ভীড়ে জমায়েত বাড়ছেই। নগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের খুব ঘনিষ্ঠ অনুসারীরাও পিছু ছাড়ছেন। এ অবস্থায় সম্মেলনের মাধ্যমে ত্যাগী, পরীক্ষিত ও পরিশ্রমী সাবেক ছাত্র-যুবনেতাদের সমন্বয়ে নগর বিএনপির কমিটি পুনবিন্যাসের দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
নগরীর মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজে ২০০৪ সালে ছাত্রসংসদের জিএস ছিলেন মশিউর রহমান যাদু। নগর ছাত্রদলের ব্যানারে দীর্ঘদিন রাজপথে লড়েছেন তিনি, হামলা-মামলার শিকার ও কারারুদ্ধ হয়েছেন কয়েকবার। তবে নগর রাজনীতিতে কাঙ্খিত মূল্যায়ন না পেয়ে জেলা শাখায় চলে যান তিনি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হন সাবেক ছাত্রনেতা মশিউর রহমান যাদু।
অন্যদিকে, সম-সময়ে সিটি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মাকসুদ আহমেদ সুমন এখন লন্ডন প্রবাসী। নগর ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি মাসুদ পারভেজ বাবু যদিও নগর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক পদে আছেন, তবে কোণঠাসা। তারপরে ছাত্রদলের নগর সভাপতি আরিফুজ্জামান আরিফ আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। খুলনার প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধে সর্বাধিক রাজনৈতিক মামলা।
এতো গেল দীর্ঘদিন নগর বিএনপি’র সম্মেলন না হওয়া এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোতে ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না হওয়ার উদাহরণ। প্রত্যাশিত পদ-পদবী পেয়েও দলের অভ্যন্তরে একনায়কতন্ত্রের কারণে নিষ্ক্রীয় রয়েছেন সময়ের ডাকসাইটে কয়েকজন নেতা। নিষ্ক্রীয়তার কারণ মিডিয়াতে ব্যাখ্যা করতে চান না নগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফকরুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ এসএম আরিফুর রহমান মিঠুসহ কয়েকজন নেতা। দীর্ঘদিন কোণঠাসা ছিলেন এমন কয়েকজন নেতা ও কাউন্সিলর সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন। সম্প্রতি নগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, শফিকুল আলম তুহিন ও আজিজুল হাসান দুলু নেতৃত্বাধীন গ্রুপের যোগ দিয়েছেন দীর্ঘদিন পদ বঞ্চিতরা। সম্প্রতি পৃথক কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
দীর্ঘদিন নগর বিএনপি’র পক্ষে গণমাধ্যমের সাথে গণসংযোগের দায়িত্ব পালন করছেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহতেশামুল হক শাওন।
তিনি বলেন, “নগর বিএনপি’র বর্তমান কমিটির যুগপূর্তি আগামী ২৫ নভেম্বর। এ দীর্ঘসময়ে সম্মেলন না হওয়ায় নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেনি। ত্যাগী-পরীক্ষিতদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। আবার পদ-পদবীধারী অনেকেই শুরু থেকেই বা কয়েক বছর নিষ্ক্রীয়। সম্মেলনের মাধ্যমে সাবেক ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি সময়ের দাবি। আমার কাছে মনে হয়েছে- সাবেক ছাত্রনেতা-যুবনেতাদের বেশিভাগই সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজার নেতৃত্বাধীন গ্রুপেই আছেন। সে কারণে আমি সর্বশেষ মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলাম।”
নগর বিএনপি’র স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হাসান দুলু শুক্রবার তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় না প্রায় ১২বছর। আগামী ২৫ নভেম্বর এক যুগ পূর্তি হবে বর্তমান কমিটির। আমরা তরুণরা সম্মেলনের এবং তরুণদের মূল্যয়ন এরমধ্য দিয়ে নতুন কমিটির দাবি জানিয়ে আসছি। যারা রাজপথে আছে তাদের পদ নেই, যাদের পদ আছে তারা রাজপথে নেই। এটা খুবি কষ্টের বিষয়। ইতিমধ্যে খুলনা জেলা বিএনপির দুই বার সম্মেলন হয়েছে, তরুণ নেতারা সময়ের সাথে সাথে যোগ্যতম পদে আসীন হয়েছেন। যে কারণে মহানগরের সিনিয়র রাজনৈতিক নেতারা প্রোটকলে জুনিয়র হয়ে গেছে, জেলার জুনিয়র নেতারা প্রোটকলে সিনিয়র হয়ে গেছে। যেটা উভয়ের জন্যই বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কষ্ট লাগে যখন এই সব নিয়ে কথা বলি, প্রতিবাদ করি, নিজেদের দাবির কথা তুলে ধরি তখনি কিছু নেতা এবং তাদের প্রভুভক্ত দালাল কর্মীরা আমাদেরকে সরকারের দালাল বলে প্রচার করে পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার চেষ্টা করে আমরা বিপদগামী, আমরা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। অনেকটা আওয়ামী সরকারের “কাছে থাকলে সঙ্গী দুরে গেলে জঙ্গী” ফর্মুলার মতন।’
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির সর্বশেষ দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সভাপতি ও মনিরুজ্জামান মনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আর ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে।
খুলনা গেজেট/এআইএন