খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে সংশয় কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন একদিন বাদেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে অংশ নেওয়া দু‘টি প্যানেলের নেতারা প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছেন। বিরোধী পক্ষ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কেন ?

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট চলাকালীন বুথ বা কেন্দ্র অভ্যন্তরে কোন প্রার্থী যাতে অবস্থান করতে না পারে সেই বিধিব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন সাধারণ আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) ১২৮ জন আইনজীবী স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে প্রদান করেছেন। এতে আইনজীবীরা জানান, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন খুলনা চেম্বার অব কমার্স ও খুলনা বাস মালিক সমিতির নির্বাচনে আবহাওয়ায় পরিণত হয়েছে। যে কারণে, সাধারণ আইনজীবীরা চরমভাবে ব্যথিত ও সামাজিকভাবে লজ্জিত। তাছাড়া বারের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে গত বছর নির্বাচনের সময় দু’জন প্রার্থী জোরপূর্বক ভোট কেন্দ্রে বা বুথের আশেপাশে ঘোরাফেরা করায় সাধারণ আইনজীবীরা ভোট প্রদানে চরমভাবে বিব্রত হন। যা নিরপেক্ষ ভোটের চরমভাবে অন্তরায় বলে অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ আইনজীবীরা।

এর আগে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে ১২ দফা দাবি উপস্থাপন করেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের নেতারা। এরপরই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ নেতারা সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের পাল্টা অভিযোগ করেন। এই সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ ভরাডুবি বুঝতে পেরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদ।

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ১২ দফা দাবি আদায়ের কথা উল্লেখ করে সোমবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের নেতারা। এ সময় নির্বাচনে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে অভিযোগ করেন সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক গাজী আব্দুল বারী। এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়ন না করলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা জানান, তফসিল ঘোষণার পর সরকারদলীয় রাজনৈতিক দলের ব্যানারে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে একটি প্যানেল প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যা সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূত। অথচ নির্বাচন কমিশন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। অতীতে নির্বাচনের একদিন আগে ব্যালট পেপার কমিশন তাদের কাষ্টোডিতে আনতেন এবং ভোটের দিন সকালে ব্যালটে স্বাক্ষর করতেন। কিন্তু বর্তমান কমিশন নির্বাচনের ১০ দিন আগে ব্যালট ছাপিয়ে এনে স্বাক্ষর করে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিয়ন্ত্রিত রুমে রেখে দিয়েছেন। যারাই আবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার ফলে ব্যালটের গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের নেতারা।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ নেতারা সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের পাল্টা অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে আইনজীবী সমিতি ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম এ অভিযোগ তোলেন। তিনি জানান, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। শত বছরের ঐতিহ্য ভঙ্গ করে অপপ্রচার শুরু করেছে, মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে তাঁরা।

নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. লিয়াকত আলী মোল্যা শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনের ব্যাপারে ১২৮ জন সাধারণ আইনজীবীরে কোনো প্রকার লিখিত আবেদন তিনি পাননি বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’টি প্যানেল যে সব অভিযোগ তুলছেন, তা নিরসনের জন্য উভয় পক্ষের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীসহ জ্যেষ্ঠ ৩ জন আইনজীবীকে ডেকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা যায় কিভাবে, সে বিষয়ে পরামর্শ করা হয়। সেখানে সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের নেতারা ১২ দফা দাবি করে একটি আবেদন করেন। এরমধ্যে গঠনতন্ত্রের আওতায় ১০ টি দাবি অন্তর্ভূক্ত, বাকি ২টি দাবি অযৌক্তিক বলে মনে করেন চেয়ারম্যান। তিনি আশা করেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অসত্য দাবি করে সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান রুকু খুলনা গেজেটকে জানান, ১২৮ জন আইনজীবীর দাবি সম্বলিত আবেদন নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার রিসিভ কপি রয়েছে। ফলে তারা মূলত: দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন বলে দাবি করেন তিনি।

 

 

খুলনা গেজেট / এআর




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!