প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া থেকে এখন আমরা বাস করি অনলাইন মিডিয়ার যুগে। বিশ্বব্যাপি নিত্য নতুন অগণিত অনলাইন মিডিয়া প্রতিদিন চোখের মধ্যে অনেকটা জোর করে ঢুকে পড়ে। অনেক সময় বিরক্তিকর অবস্থার অবতারণা করে। এমনই এক পরিস্থিতিতে এক বছর আগে জন্ম হলো ‘খুলনা গেজেট’ নামে আর একটি নতুন অনলাইন মিডিয়ার।
প্রতিটি জন্মের পিছনে কোন না কোন উদ্দেশ্য থাকে। একপ্রকার কাকতালীয়ভাবে এই নতুন জন্মটির ভিতরের রহস্যের সাথে আমার সম্মিলন ঘটেছিল।
একটু খুলে বলি।
খুলনা গেজেট এর জনক জনাব গাজী আলাউদ্দিন আহমদ খুলনার সাংবাদিকতার জগতে একটি পুরনো নাম। জন্মসূত্রে আমার ও তাঁর মধ্যে এলাকাগত ও মনের মিল আছে। তাই মাঝে মাঝে মনের ভাব বিনিময়ে হয়ে থাকে। নানাবিধ আলোচনায় আমরা মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে থাকি। ডুমুরিয়ার বনেদী পরিবারের সন্তান জনাব গাজী আলাউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের সাংবাদিক জগতে নানাবিধ বিতর্কের উর্ধ্বে একজন মানুষ। পুরাপুরি সাংবাদিক পেশাধারী না হয়েও সাংবাদিকতার নেশায় তিনি সদা বিভোর। দীর্ঘদিন জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন পত্র পত্রিকার বিভিন্ন দায়িত্বে কাজ করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার আঘাতে তিনি জর্জরিত। সারাজীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতা নিজের মতো করে সাংবাদিকতার জগতে কাজে লাগানোর জন্য তাঁর মনটা সদা ব্যাকুল থাকে।
আলোচনার ফাঁকে একদিন তিনি তাঁর মনের আকুতি আমাকে খুলে বললেন। আমি এই বিষয়ে একেবারে অনভিজ্ঞ হলেও কাজটা যে মহৎ হবে তা ভালভাবেই বুঝতাম। বিশেষ করে জনাব গাজী আলাউদ্দিন আহমদের মত একজন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মীর হাতের ছোঁয়া পেলে একটি অনলাইন মিডিয়া কতটা সমৃদ্ধ হবে তা অনুমান করার মত জ্ঞানটুকু অন্তত বিধাতা আমাকে দিয়েছেন।
আলোচনা চলতে থাকলো। আমি আমার মতো নিজের স্বার্থে ব্যস্ত। তিনি কিন্তু লেগেই ছিলেন। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজের মেধায় ‘খুলনা গেজেট’ নামে এই নতুন দিগন্তের শুভ সূচনা করলেন। আমি রীতিমতো বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ এমন সাহসী পদক্ষেপে আমি বরাবরই দুর্বল।
ঢাকা কিম্বা খুলনা যেখানেই থাকিনা কেন ‘খুলনা গেজেট’ ও গাজী আলাউদ্দিন ভাই আমার হাতের মুঠোয় প্রযুক্তির কারণে। খুলনা গেজেট এর উপস্থাপনা চোখে পড়ারই মতো। অন্যান্য অনেক অনলাইন মিডিয়ার মতো ‘খুলনা গেজেট’ যদি বিনা নোটিশে চোখের সামনে ভিড় করে তাহলে বিরক্ত হই না; বরং চোখে তৃপ্তি অনুভব করি। মাঝে মাঝে আমার অনভিজ্ঞ হাতে কিছু মনের কথা লিখে পাঠাই। আমার লেখার মান বিবেচনা না করেই ‘খুলনা গেজেট’ তা প্রকাশ করে থাকে। এজন্য আমি ‘খুলনা গেজেট’ এর কাছে রীতিমতো ঋণী হয়ে পড়ছি। তাছাড়া আমার এই অবসর জীবনে সময় কাটাতে ‘খুলনা গেজেট’ আমাকে কিছু না কিছু লিখতে বাধ্য করায় আমার বেশ ভাল লাগে।
একদিন আমি খুলনায়। সেদিন খুব বৃষ্টি ছিল। সারা বিকাল খুলনা রয়েল মোড়ে বৃষ্টিতে আটকে ছিলাম। বৃষ্টির মাঝে বেশ কয়েকবার ‘খুলনা গেজেট’ এর অফিসে আকস্মিক ভ্রমণের ইচ্ছে হলো। কিন্তু বৃষ্টি চরম আকার ধারণ করলো। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নেমে এলো। বৃষ্টি থেমে গেল।
আমি এক প্রকার আকস্মিকভাবে ‘খুলনা গেজেট’ অফিসের সামনে হাজির হলাম। বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যার আকাশ অন্ধকারে ঢাকা থাকলেও ‘খুলনা গেজেট’ এর বিশাল জ্বলজ্বলে আলোকিত সাইনবোর্ড দেখে অফিস চিনতে একটুও বেগ পেতে হয়নি। ভিতরে প্রবেশ করে আলো ঝলমল অফিসে প্রথমেই পেলাম কয়েকজন কর্মী। তারা সবাই মন দিয়ে খবর আপলোড দিতে ব্যস্ত ছিলেন। আমাকে দেখে অনেকেই চিনলেন। সৌভাগ্যক্রমে খুলনা গেজেট এর জনক জনাব গাজী আলাউদ্দিন আহমদ নিজেও তাঁর রুমে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর রুমে ঢুকতেই তিনি রীতিমতো অবাক হয়ে আমাকে স্বাগত জানিয়ে বসতে দিলেন। তারপর সদ্য জন্ম নেওয়া স্বপ্নের ‘খুলনা গেজেট’ এর সকল কর্মকাণ্ড ঘুরে ঘুরে দেখালেন। আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে ঢের অধিক উন্নত কলেবর দেখে মুগ্ধ হলাম। তারপর সেখানে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে ফিরে গেলাম বাসায়।
হঠাৎ একদিন এক পরিচিত নতুন সাংবাদিকের সাথে কথা হচ্ছিল। সে আমার অনেক স্নেহের। তাকে বললাম, তুমি এখন কোথায় কাজ করছো?
-আমি ‘খুলনা গেজেট’ এ কাজ করছি।
আমি একটু আগ্রহ নিয়ে তার সাথে আরো আলাপ শুরু করলাম। আমার মূল উদ্দেশ্য একটু জটিল ছিল। সেটাও খুলে বলছি।
আজকাল অধিকাংশ পত্র-পত্রিকার মালিকেরা বিভিন্ন ধরণের রিপোর্টার নিয়োগ করে তাদের একটা কার্ড হাতে ধরিয়ে দেন। সেই কার্ড পুঁজি করে নিয়োগকৃত সাংবাদিকগণ নিজের ও মালিকের আখের গোছানোর কাজ করে থাকেন। ‘খুলনা গেজেট’ তাদের মত একই কাজে লিপ্ত কিনা তা বুঝতে চেষ্টা করলাম। তাই স্নেহের সাংবাদিককে বললাম,
-খুলনা গেজেট থেকে তোমাদের কোন সম্মানী দেয়?
-জী আংকেল দেয়।
-কিভাবে দেয়? মাসিক, না অন্য কোনভাবে? বা কত টাকা দেয়?
-যা দেয় তা নিয়মিত দেয়। আমি বাড়িতে বসে কাজ করি। করোনার মধ্যেও সম্মানী ঠিকমত পাচ্ছি।
-তাই নাকি!
আমি আরো একবার বিস্মিত হলাম। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে আরো একটু সাহায্য পেলাম।
আমি ধন্যবাদ জানাই এই অনলাইন নিউজ পোর্টালটির প্রকাশককে, যিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।
হয়তো একদিন ‘খুলনা গেজেট’ অনলাইন মিডিয়ার জগতে ঝড় তুলতে সক্ষম হবে। আমার জীবদ্দশায় সেই দিনটি দেখে যেতে পারলে নিজেকে সার্থক মনে করবো। আর আমি চলে গেলেও আমার পরবর্তী প্রজন্ম যুগ যুগ ধরে ‘খুলনা গেজেট’ এর সুফল ভোগ করুক এই কামনা করি।
(লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, সোনামুখ পরিবার ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা)