খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

‘খুলনা গেজেট’র অর্জন সবার আগে সব খানে

কাজী মোতাহার রহমান

করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব থমকে গেছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ। অর্থনীতিতে মন্দাভাব। হতাশার কালো মেঘ চারিদিকে। এর মধ্যে দিয়ে খুলনা গেজেট নামক অনলাইন দৈনিক এক বছর পার করে এসেছে। আমরা দ্বিতীয় বর্ষে পা দিয়েছি। এ সময় আম্ফান, ইয়াস আর করোনার আর্তনাদ ছিল আমাদের নিত্য সঙ্গী।

খুলনা গেজেটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ আনন্দঘন মুহুর্তে সুসংবাদের মধ্যে দুঃসংবাদ সংবাদপত্রসেবী হিসেবে আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। দুঃসংবাদ এটা, হংকং এর গণতন্ত্রমনা মানুষের প্রিয় পত্রিকা অ্যাপল ডেইলী ২৬ জুন থেকে চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। জনপ্রিয় দৈনিকটি কখনও আর আলোর মুখ দেখবে না। দুঃসংবাদের পাশাপাশি একটি সুসংবাদ গণমাধ্যমের প্রতি পাঠকের আস্থা ফিরেছে। গত ২৩ জুন রয়টার্স ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও গণমাধ্যমের ওপর পাঠকের বিশ্বাস বেড়েছে। হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস ফিরে এসেছে। গণমাধ্যমগুলো আরও বেশি ডিজিটালাইজড হতে উৎসাহ যুগিয়েছে। তাদের জরিপের তথ্য অনুযায়ী বিক্রি ও বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর প্রভাব পড়ায় মুদ্রিত গণমাধ্যমগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ভাইরাসের ভয়ে পাঠকরা ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশনের দিকে ধাবিত হয়েছেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির আর্বিভাব, বিশেষ করে ইন্টারনেট ও ওয়েব আবিস্কার সাংবাদিকতার জগতে পরিবর্তন এনেছে। এরই মধ্যে বদলে গেছে সাংবাদিকতার ধরণ ও আঙ্গিক। যুক্ত হয়েছে নানা বৈচিত্র।

যুগের পরিবর্তনের কারণে ইরান সরকারের ইংরেজী ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভি এবং আরবি সংস্কারণ আল আলম টিভি অনলাইনে ফিরে এসেছে (যুগান্তর ২৪ জুন ২০২১)।

একটি কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোন তার সাথে ইন্টারনেট সংযোগ, ব্যাস সাংবাদিকতা করার জন্য যথেষ্ট। আমাদের খুলনা সার্কিট হাউস অথবা হাদিস পার্কের জনসভাস্থল অথবা সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্থের বিবরণ অথবা শেওলা নদীতে তেল বোঝাই জাহাজ ডুবির সংবাদ পাঠাতে অসুবিধা হবে না। আমাদের সহকর্মীরা আম্ফান ও ইয়াস বিধ্বস্ত কয়রা, শ্যামনগর ও আশাশুনির স্বচিত্র প্রতিবেদন মুহুর্তের মধ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। মোবাইল ফোনের স্ক্রিনেই সংবাদ, ছবি ও ভিডিও আদান প্রদান করা হয়। সংবাদ লেখার জন্য কাগজ, ছাপার জন্য নিউজপ্রিন্ট, নানা রংয়ের কালি, প্লেট ও ছবির জন্য জিংক এর ব্লকের প্রয়োজন নেই। সেই লেটার প্রেসের টাইপ এবং জিংকের ব্লক যাদুঘরে খুঁজে পাওয়া যাবে না। গণমাধ্যমের সঠিক তথ্য জানা ও জানানোর যে ইচ্ছে, গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকারের বাসনা তা অনেকাংশে পূরণ করেছে আজকের অনলাইন দৈনিক।

ওয়েব গণমাধ্যম পরিবেশকে গণতান্ত্রিক করে তুলেছে। সাংবাদিকতা এখন সকলের জন্য উন্মুক্ত। তাৎক্ষনিক তথ্য, ঘটনা প্রবাহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রচারের জন্য জনগণই এখন সূত্র। এখন জনগনই সাংবাদিকতার মূল শক্তি।

২০১০-২০১১ সালের আরব বসন্ত অর্থ্যাৎ উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে তিউনিশিয়া ও মিশরের গণআন্দোলন সফল করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বড় ভূমিকা রাখে। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওর্য়াক ও শাহবাগের আন্দোলনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়।

সনাতন পদ্ধতির সাংবাদিকতার অবসান ঘটিয়ে ইন্টারনেট সাংবাদিকতার মাধ্যমে সাড়া জাগিয়েছে খুলনা গেজেট। কোন ঘটনা প্রবাহ জানার জন্য ভোরের দৈনিকের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না। নগরীর যেকোন স্থানের রাজনৈতিক সমাবেশ, আইন আদালত, দূর্যোগ, অগ্নিকান্ড, ব্যবসা বণিজ্যে, বিনোদন, ব্যাংক-বীমা, অথবা খেলার খবরের জন্য রাতের প্রহর গুনতে হচ্ছেনা, সকালের দৈনিক পত্রিকার জন্য। প্রযুক্তির কল্যাণে খুলনা গেজেটের সাংবাদিকতার ধরণ স্ক্রিন নির্ভর হয়ে উঠেছে। মুহুর্তের মধ্যে আপনার স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে আমরা সব তথ্য পৌঁছে দিচ্ছি।

আজকের যুগে কোন ঘটনা প্রবাহ বা তথ্য লুকানোর কোন সুযোগ নেই। সবার আগে সবখানে খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য বারো মাস বয়সী খুলনা গেজেট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছাপাখানার মেশিন বিকল, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, হরতাল, অবরোধ, অতিবৃষ্টি, দাবদাহ ও শৈত্যপ্রবাহে কাগজ পাঠকের কাছে কী করে পৌঁছাবে, এখন আর এ উদ্বেগ আমাদের মধ্যে নেই।

আগে স্থানীয় দৈনিকগুলোর পাঠক ছিল পিরোজপুর থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত। বিজ্ঞানের বদৌলতে এখন আমাদের পাঠক সারা বিশ্বে। প্রবাসে বসবাসরত এ অঞ্চলের মানুষের কাছে এ ভূখন্ডের খবর তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে দিতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের সফলতা এখানেই।

(লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, খুলনা গেজেট)

খুলনা গেজেট/এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!