খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের হামলার গোয়েন্দা তথ্য আছে : পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী
তীব্র গরম আর রোদে হাঁসফাঁস আরও ৭ দিন

খুলনা অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক 

টানা আট দিন তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে খুলনা অঞ্চলে। ভ্যাপসা গরমে খুলনাসহ বিভাগের খেটে মানুষ বিপাকে পড়েছে। আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মাঝারি তাপদাহে খেটে খাওয়া রোজাদাররা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। রোববার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেছেন, এমন অবস্থা আরও কিছু দিন অব্যাহত থাকবে। 

খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আজ দেশের ১৭টি জেলা ও অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া খুলনায় ৩৭, যশোরে ৩৮, মোংলাতে ৩৭.৬, কুমারখালীতে ৩৭.৯। আর বরিশালে ৩৭, খেপুপাড়ায় ৩৭, পটুয়াখালীতে ৩৭.২ ও ভোলায় ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসহ মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের তীব্র গরম পরিস্থিতি আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত থাকতে পারে। এই সময় পর্যন্ত মৃদু, মাঝারি ও তীব্র দাবদাহ হতে পারে। তবে ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র তাপ প্রবাহ থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। দাবদাহের পরেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯ এপ্রিলের পর বৃদ্ধি পাবে বৃষ্টিপাত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এটি আরো দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

বজলুর রশিদ জানান, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার তাপ প্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। 

এদিকে তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা গরমে অস্থির হয়ে পড়েন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে গা এলিয়ে দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। অনেক পথচারী ছাতা মাথায় দিয়ে চলাচল করছেন। এছাড়া গরমে সদর হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের হাসফাঁস অবস্থা। প্রত্যেক ওয়ার্ডের বেশির ভাগ ফ্যান আস্তে ঘোরার কারণে অনেকে হাত পাখা কিংবা টেবিল ফ্যান নিয়ে এসেছেন। প্রচণ্ড রোদের কারণে শ্রমজীবী মানুষদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

রিকশাচালক আসলাম উদ্দিন বলেন, রিকসা চালালেও আল্লাহপাক সব কটি রোজা রাখার তৌফিক দিয়েছেন। রোজার শুরুতে কিছু মনে না হলেও ৭/৮ দিন খুব কষ্ট হচ্ছে রিকশা চালাতে। দুপুর হলেই ক্লান্তিতে রিকশার প্যাডেল আর চলছে না। বিকেলের আগেই বাড়িতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এমন গরম পড়লে রোজা রেখে রিকশা চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার খুদিয়াখালি গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম অনিক বলেন, এখন ভুট্টা কাটার সময়। তিন দিন যাবত নিজের ভুট্টা ক্ষেতে ভুট্টা কাটছি। প্রচণ্ড রোদের কারণে গরমে আজ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছি। অনেক রোজাদার কৃষক মাঠে কাজ করছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে কাজ করায় দুষ্কর হয়ে পড়েছে তাদের। নির্ধারিত সময়ের আগেই বাড়ি চলে যাচ্ছেন।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত খুলনা, রাজশাহী ও বৃহত্তর ফরিদপুর-মাদারীপুর এলাকার জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপ প্রবাহের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর জেলার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সময়ে দেশের অন্যান্য জেলাগুলোর তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা আরো জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসে তিন থেকে পাঁচটি মাঝারি শিলাবৃষ্টিসহ বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া এক থেকে দুটি তীব্র কালবৈশাখীর সম্ভাবনা রয়েছে। তীব্র ঝড়ে সাধারণত বাতাসের বেড় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে কিংবা তার চেয়ে বেশি গতিতে বাতাসের প্রবাহ থাকতে পারে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সেই সঙ্গে এপ্রিলের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার শঙ্কাও রয়েছে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!