খুলনা অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন যিনি। খুলনা মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ যার নামে, এছাড়া আযম খান কমার্স কলেজ ও খুলনা সিটি ল’ কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় যার অসামান্য অবদান রয়েছে তিনি খুলনার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সমাজসেবক এস এম এ মজিদ। গত ৬ জুলাই ছিল তাঁর ৫৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী।
এস এম এ মজিদ তেরখাদা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বারাসাত গ্রামে সম্ভ্রান্ত ফকির বংশে ১৯০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শাহ্ মোবারক আলী ও মাতার নাম বেগম মেহেরুন্নেসা। তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন, পরবর্তীতে খুলনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তৎকালীন মুসলিম ছাত্রদের অন্যতম ছাত্রাবাস ‘বেকার হোস্টেল’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি।
১৯৩৬ সালে মুসলিম লীগের প্রভাবে গঠিত উপমহাদেশের প্রথম ছাত্র সংগঠন ‘নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এস এম এ মজিদ সভাপতি ও শামসুর রহমান সম্পাদক মনোনীত হন ছাত্র সংগঠনটির। ১৯৩৭ সালে কাউন্সিল এর মধ্য দিয়ে তিনি পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে সংগঠনটির নাম ‘নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ’ করা হয়।
’৪৭ এর দেশ বিভাগের পর সংগঠনটি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গ্রুপ সরকারের লেজুড়বৃত্তি করতে থাকে, অপর গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য প্রগতিশীল চিন্তার নেতৃবৃন্দ। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি শেখ মুজিব ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে সংগঠনটির অসাম্প্রদায়িক রূপদানের লক্ষ্যে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ’ নামকরণ করা হয়।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হলে এস এম এ মজিদ দেশ জাতি গঠনে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শিক্ষায় পশ্চাৎপদ পূর্ব বাংলার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি খুলনা জেলা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব গ্রহণ করে খুলনা জেলায় শিক্ষার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেন। একে একে হাই স্কুল, ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করে খুলনার মানুষের হৃদয়ের ভালবাসায় সিক্ত হন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুলনা আযম খান কমার্স কলেজ, খুলনা সিটি ল’ কলেজ, খুলনা সিটি কলেজ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তাঁর জন্মস্থান তেরখাদার বারাসাত গ্রামে নিজ পৈত্রিক জমির উপর ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নর্থ খুলনা হাই স্কুল। তিনি নিজেকে একজন সমাজসেবক হিসাবে পরিচয় দিতেন।
এস এম এ মজিদ পাকিস্তান কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে ঢাকা এম এন এ রেস্ট হাউসে ৬ জুলাই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টায় শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন।
৭ জুলাই খুলনার গণমানুষের প্রিয় নেতা আহমদ মজিদকে টুটপাড়া গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
খুলনা গেজেট/ এস আই