গত বছরের দুঃসহ স্মৃতির ক্ষত শুকাতে না শুকাতে আবারও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গেল কয়েকদিনে খুলনায় সবজির পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। ফলে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
সোমবার খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহেও যা বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৩৫-৪০ ও ২৮-৩০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, এ কারণে দাম বেড়েছে।
বড় বাজারের মেসার্স বাগদাদ ট্রেডিং এর স্বত্ত্বাধিকারি ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করি। সেখানে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকায় তারা দাম বাড়িয়েছে। ফলে আমাদের এখানেও দাম বেড়েছে।
এদিকে এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে চিচিঙ্গা, বেগুন, বরবটি, ঢেড়স, কাকরোল, পটোল ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া করলা ৬০-৭০ টাকা, শসা ৩৫-৪০ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা, পেঁপে, কচুরমুখি ৪০-৫০ টাকা । সব ধরনের শাক সবজির দামও বেশি ।
সবজি ব্যবসায়ীরা বলেন, বন্যায় সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় দাম বেড়েছে। কয়েক দফায় বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলের ৩৭ টি জেলা প্লাবিত হয়ে সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, গত বছর পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। এজন্য পেঁয়াজের দাম বাড়লেই দুঃশ্চিন্ত হয়। আর সবজির দামতো যেকোন সময়ের তুলনায় বেশি ।
এদিকে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অবিলম্বে খোলা বাজারে ট্রাক সেলের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করবে, নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুল্কহার পুননির্ধারনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং আইপি ও কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্ক ফোর্স কমিটি।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্ক ফোর্স কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে, আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। পেঁয়াজের সংকট বা মূল্য বাড়ার কোন সংগত কারণ নেই। পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্য বাড়ার চেষ্টা করা হলে সরকার আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা হয়েছে।
বৈঠকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্ক ফোর্স কমিটির বৈঠকে দেশের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। পেঁয়াজের মজুত, আমদানি ও সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করা হয়। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে দেশব্যাপী বাজার মনিটরিং জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্ক ফোর্স কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি এবং বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. ওবায়দুল আজম, অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) মো. হাফিজুর রহমান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসানসহ টাস্ক ফোর্স কমিটির সদস্যরা।
খুলনা গেজেট/এনএম