ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার এর দর নির্ধারণ করে দিলেও পরের দিন খুলনায় তার কোন প্রভাব পড়েনি, বিক্রি হচ্ছে আগের বর্ধিত দামেই। এখন আরেক দফা দাম বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা আগাম জানিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তারা পাইকারী ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে কপালে ভাঁজ পড়েছে শহরে বসবাসকারি সাধারণ মানুষের।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) খুলনার বড় বাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে জানা গেছে, পাইকারী বাজারে পুষ্টি (৫ লিটারের বোতল) ৬০০ টাকা, ফ্রেশ (৫ লিটার) ৬৩০ টাকা, তীর (৫ লিটার) ৬৩০ টাকা, রূপচাদা (৫ লিটার) ৬৩৫ টাকা, বসুন্ধারা ( ৫ লিটার) ৬০০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১২৪ টাকা পঞ্চাশ পয়সা বিক্রি হয়েছে।
খুচরা বাজারে সয়াবিন তেল পুষ্টি (৫ লিটারের বোতল) ৬২০ টাকা, ফ্রেশ (৫ লিটার) ৬৫০ টাকা, তীর (৫ লিটার) ৬৪৫ টাকা, রূপচাদা (৫ লিটার) ৬৫০ টাকা, বসুন্ধরা (৫ লিটার) ৬৪০ টাকা এবং খোলা তেল প্রতিকেজি ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গতকাল বুধবার সরকার ৫ লিটারের সয়াবিনের বোতল ৬২৫ টাকা ও খোলা সয়াবিনের লিটার সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেলের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নগরীর বাবুখান রোড়ের রহমত স্টোরের মালিক জানান, সরকার নির্ধারিত দরে আপাতত তেল বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, পাইকারি দোকানে তেলের দাম বেশি। তাছাড়া সরকরের ঘোষণা বাস্তবায়ন হতে আরও ১৫ দিন সময় লাগবে। যদিও সরবরাহকারী বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসে তেলের দাম আরো বাড়বে বলে আভাস দিয়েছেন।
রূপসা বাজারের শহিদুল স্টোরের দোকানি জানান, সরকার তেলের দাম কমানোর জন্য যে ঘোষণা দিয়েছেন তা তিনি জানেন না। তিনি বেশি দরে তেল কিনেছেন, তাই আগের দরে তেল বিক্রি করছেন। তার ঘরে বোতলজাত অন্য তেল সাজানো থাকলেও মিডিয়ার লোক পরিচয় পেয়ে তেল বিক্রি করছেন না বলে জানান।
বড় বাজারের খোলা তেল ব্যবসায়ী মাহিন ট্রেডার্সের ম্যানেজার হাসান জানান, সরকার হঠাৎ এরকম ঘোষণা দিলে হবে না, কারণ প্রত্যেক ব্যবসায়ীর ঘরে বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার তেল মজুদ আছে। সরকার তাদের কোন ক্ষতিপুরণ দেবে না। তেলের দাম কমাতে হলে সরকারকে আগে মিলগেটের রেট নির্ধারিত করতে হবে। মিলগেটের রেট নির্ধারিত হলেই বাজার দর ঠিক হবে। তা নাহলে বর্তমান যে অবস্থা আছে তার থেকে মূল্য আরো বাড়তে পারে।
রূপচাদা খুলনার সরবরাহকারী জানান, তারা বর্তমান দরে তেল বিক্রি করছেন। তাছাড়া তাদের ঢাকার কর্মকর্তারা আজ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে দাম-দর নিয়ে আলোচনায় বসবে। আগামী শনিবার থেকে নতুন তেলের দাম কার্যকর হবে।
রহমত স্টোরে কথা হয় গৃহিনী মমতাজ বেগমের সাথে। তার মাসে ৫ লিটার তেলের প্রয়োজন হয়। বর্তমান দরের সাথে মিল না থাকায় আড়াই লিটার তেল ক্রয় করেছেন। বাকীটা পরে ক্রয় করবেন। তিনি জানান, সরকারের নিত্যপ্রয়োজনীর জিনিষের মূল্য নিধারণ ও তা কার্যকর করা উচিত। তা নাহলে এ সংকট কখনো কাটবে না।
উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গতকালকের ঐ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন (খোলা) মিলে গেটে ১০৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ১১০ টাকা আর খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা বিক্রি করার কথা। বোতলজাত সয়াবিনের মিল প্রতি লিটার গেট মূল্য ১২৩ টাকা, পাইকারি মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেট মূল্য ৫৮৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৬০০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৬২৫ টাকা নির্ধারিত হয়। আর পাম সুপার তেল প্রতি লিটার মিল গেটে মূল্য (খোলা) ৯৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৯৮ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেএম