খুলনার আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তা আবরারুর রহমান শুভ (৩৪) আত্মহত্যার ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। ইতিমধ্যে শুভ’র সর্বশেষ কর্মস্থলে ব্যাংকটির খুলনার শাখায় বড় অংকের অর্থের গড়মিল পাওয়া গেছে। রবিবার ঢাকা থেকে একটি অডিট টিম ব্যাংকটিতে এসে প্রায় ২৮ লাখ টাকার আত্মসাতের সাথে শুভ’র সম্পৃক্ততা পেয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক এম এম রফিকুল ইসলাম।
জানা যায়, ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সুপারিশে শুভ চাকরি পেয়েছিলেন। নগরীর স্যার ইকবাল রোডের খুলনা শাখায় সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে তিনি কর্মরত ছিলেন। তবে তিনি ক্যাশ ইনচার্জেরও দায়িত্বের পাশাপাশি শাখার এটিএম বুথ এবং ময়লাপোতা বুথে টাকা ডিপোজিটের দায়িত্বে ছিলেন। প্রায় তিন বছরের বেশি শুভ এই শাখায় কর্মরত ছিলেন। গত ১১ অক্টোবর শাখা ব্যাংক থেকে রিলিজ নেন এবং ১৩ অক্টোবরের মধ্যে চুকনগর শাখায় যোগদানের কথা ছিল।
কিন্তু গত ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে মহানগরীর টিবি বাউন্ডারী রোড মৌলভীপাড়ায় মডার্ণ টাওয়ারের (ভাড়া বাসা) নয়তলা থেকে পড়ে মারা যান। তার বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল রায়েন্দা রাগুলবুনিয়া এলাকার মোঃ আতিয়ার রহমানের ছেলে। এ ঘটনার পর খুলনার শাখার ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিবারে শুভ’র বাবা-মা, স্ত্রী এবং একটি বোন ছিলেন।
এদিকে শুভ’র আত্মহত্যার কারণ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় ব্যাংকে। এক পর্যায়ে স্থানীয় একজন বেসরকারী চাকুরিজীবির ৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর তা একাউন্টে যোগ না হওয়ার বিষয়ে একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে টনক নড়ে আল আরাফাহ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। এরপর দুবাই বাংলাদেশ সিমেন্ট কোম্পানীর বিভিন্ন সময়ে জমা দেওয়া ১৪ লাখ টাকা একাউন্টে জমা না পড়ায় বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখা শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এদিকে শুভ’র আত্মহত্যার পর দুটি এটিএম বুথের টাকা জমা এবং উত্তোলনের সাথে সমন্বয় না পাওয়ায় সেটি তদন্ত করে ৯ লাখ টাকার গড়মিল পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে শুভ’র বাবা আতিয়ারের সাথে রবিবার দুপুরে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ব্যাংকের কোন বিষয় আমি জানি না।
ব্যাংকটির খুলনা শাখার ব্যবস্থাপক এম এম রফিকুল ইসলাম জানান, শুভ আত্মহত্যার পর অনেকগুলো লেনদেনে গড়মিলের প্রমাণ মিলেছে। ঢাকা থেকে অডিট টিম এসে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৮ লাখ টাকার গড়মিল পাওয়া যায়। যার সাথে শুভ’র সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বিষয়টি আরও তদন্ত করা হচ্ছে। আর কেউ জড়িত আছে কিনা তাও ভাল করে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শুভ’র বাবাকে বিষয়টি জানানো হবে। এছাড়া স্থানীয় ব্যাংকের আইনজীবির সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনার শাখার একজন অডিট অফিসার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক) বলেন, ব্যাংকের দুর্নীতি প্রমাণ মিললে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নিতে হবে। তবে প্রধান কার্যালয় নির্দেশ দিলে আমরাও পুনরায় শাখার দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করতে পারি।
খুলনা গেজেট/এনএম