দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ থাকওে দাম বেড়েই চলেছে। আরও মূল্য বৃদ্ধির আশায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারত রপ্তানি বন্ধের দ্বিতীয় দিনেও খুলনার পাইকারি ও খুচরা বাজারে বাড়তি পেঁয়াজের দাম।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর ) নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, মঙ্গলবারের তুলনায় আজ দাম আরও বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে, মঙ্গলবার যা বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়। এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ গতকাল ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আজও সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খুচরা বাজারেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬৫ টাকা দরে, যা মঙ্গলবার ছিল ৫০-৫৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৩-৮৪ টাকা দরে, যা ছিল ৬৫-৭৫ টাকা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে ।
আমদানিকারকরা জানান, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের আগে থেকেই দাম কিছুটা বাড়তি ছিল। রপ্তানি বন্ধের কারণে সরবরাহ কমেছে, দামও কিছুটা বেড়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পরে ব্যবসায়ীরা নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি করেনি। তাহলে তারা পূর্বের দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করার কথা, কিন্তু তা না করে তারা বাজারে ইচ্ছেমত দাম বাড়াচ্ছে। লাগামহীন এ মূল্য বৃদ্ধির জন্য তাঁরা অসাধু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারের বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দুষছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, আমরা ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে তদারকির কাজ করছি। মঙ্গলবার নগরীর দৌলতপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিদিনই আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জে বর্তমানে পেঁয়াজের মজুদের পরিমাণ ৫ লাখ ২৫ হাজার টন। তবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের মৌসুম আসতে এখনও ছয় মাস বাকি। এই সময়ে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১১ লাখ টন।
কমিশনের এ হিসেবে দেখা যায়, আগামী প্রায় তিন মাসের পেঁয়াজ মজুদ আছে। বাকি তিন মাসের পেঁয়াজ আমদানি করেই মেটাতে হবে। অর্থাৎ, মার্চের আগপর্যন্ত আরও প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির দরকার পড়বে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে ভারতের বিকল্প হিসেবে আটটি দেশের বাজারের সন্ধান করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
দেশগুলো হচ্ছে- মিয়ানমার (বার্মা), আফগানিস্তান, মিসর, তুরস্ক, চীন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডস।
এর বাহিরে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা পাকিস্তান, মিশর ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির কার্যক্রম শুরু করেছেন।
এদিকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা।
খুলনা গেজেট / এমএম