১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর, শুক্রবার। খুলনার পূর্বাকাশে প্রত্যুষে নতুন সূর্য উকি দেয়। তখনও শহরবাসী ঘুমে আচ্ছন্ন। গল্লামারী ও শিরোমনিতে দু’পক্ষের মেশিনগান গর্জে উঠছে। শহরের পথে প্রান্তরে হাজার হাজার মুক্তিবাহিনী। শিপইয়ার্ড, ফায়ার বিগ্রেড, ওয়াপদা, পিএমজি, খুলনা সার্কিট হাউজের সেনা ছাউনী গুটিয়ে পাকবাহিনীর কর্মকর্তারা নিউজপ্রিন্ট মিলে আশ্রয় নেয়। সূর্য্যদয়ের পরপর গল্লামারী রেডিও সেন্টার থেকে সেনা ছাউনী ছেড়ে কনভয় নিয়ে সার্কিট হাউজে উপস্থিত হয়। শিরোমনি যুদ্ধেও পরাজয়ের খবর। কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশবানী কলকাতা কেন্দ্র থেকে ইথারে ইথারে ভেসে আসে খুলনায় পাকবাহিনীর পতনের খবর।
খুলনার মুক্ত বাতাসে দীর্ঘ নি:শ্বাস নেয় শহরবাসী। চারিদিকে গগন বিদারী শ্লেগান ‘জয় বাংলা’। সকাল নয়টা নাগাদ নয় নম্বর সেক্টর অধিনায়ক মেজর জয়নাল আবেদীন, লে: গাজী রহমতুল্লাহ দাদু বীর প্রতীক ও মুজিববাহিনীর আঞ্চলিক প্রধান স ম বাবার আলী সার্কিট হাউজে উপস্থিত হয়ে পতাকা উত্তোলন করেন। চারিদিকে গোলাগুলি থেমে গেছে। পাকবাহিনী ভীত সন্তাস্ত্র হয়ে সার্কিট হাউজে আশ্রয় নেয়।
এরপর দুুপুরের পর্ব। সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিট। স্থান খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দান। মিত্র বাহিনীর ৯ ইনফেন্ট্রি ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল দলবীর সিংহ-এর কাছে আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করে পাকিস্তান বাহিনীর ১০৭ খুলনাস্থ সদর দপ্তরের অধিনায়ক বিগ্রেডিয়ার মোঃ হায়াত খান (পিএ ২১০৩)। এ সময়ে ৮ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আবুল মঞ্জুর, ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল ও মেজর জয়নাল আবেদীন উপস্থিত ছিলেন। আটজন পাক সেনা কর্মকর্তা আত্মসমাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী পরাজিত পাক সেনাদের নিরাপত্তার জন্য জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। মুক্তিসেনারা ক্ষেতওয়াত ওয়েল মিল, কমার্স কলেজ, ইউনাইটেড ক্লাব, আজকের খুলনা শপিং মল ও নিউজপ্রিন্ট মিলে ক্ষণকালের জন্য ক্যাম্প স্থাপন করে।