র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘অপারেশন সুন্দরবন’। গেল ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে অপারেশন সুন্দরবন সিনেমাটি। ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশের মোট ৪৫টি প্রেক্ষাগৃহে এ সিনেমা চলছে।
শনিবার (১ অক্টোবর) ঢাকার বাহিরে সর্বপ্রথম সিনেমাটির প্রচারে খুলনায় আসে টিম অপারেশন সুন্দরবনের সদস্যরা। এদিন পড়ন্ত বিকেলে খুলনার শহিদ হাদিস পার্কে দর্শকে মুগ্ধ হয়েছেন টিম অপারেশন সুন্দরবনের সদস্যরা। সিনেমাটির নায়ক সিয়াম আহমেদ, নায়িকা নুসরাত ফারিহা ও রোশানকে পেয়ে মেতেছে দর্শকরাও। অপারেশন সুন্দরবন টিমকে দেওয়া হয় সংবর্ধনা।
এই সংবার্ধনার আয়োজন করে খুলনা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থা, কুয়েট ফিল্ম সোসাইটি এবং ফুড স্টুডিও। সংগঠন তিনটির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সেখানে দর্শকদের সাথে নাচে-গানে মেতে উঠে তারা। ছুড়ে দেন ফুল। আর প্রিয় নায়ক-নায়িকার ছোড়া ফুল লুফে নিতে দৌড়-ঝাপ করে দর্শকরাও। তোলেন সেলফিও। সবমিলিয়ে খুলনার শহিদ হাদিস পার্ক প্রাঙ্গণে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে শঙ্খ সিনেমা হল এবং লিবার্টি সিনেমা হল পরিদর্শনে গিয়ে টিম অপারেশন সুন্দরবনের পক্ষ হতে হলের স্টাফদের উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সিনেমারনায়িকা নুসরাত ফারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের দর্শক সিনেমা দেখতে হলে যাচ্ছে। এবং সেটার সাথে নতুন এক জোয়ার যুক্ত করবে অপারেশন সুন্দরবন। এর আগে যে সিনেমাগুলো ঈদে মুক্তি পেয়েছে কম বেশি সবাই সিনেমা হলে গেছে। আমাদের সিনেমাটি কোন অকেশনে রিলিজ দিতে পারিনি। তারপরও দর্শকদের কাছে থেকে যে পরিমাণ দর্শকপ্রিয়তা, ভালোবাসা এবং রেসপন্স পাচ্ছি তাতে আমার মনে হয় পূজোর ছুটিতে আরও দর্শক হবে।
নায়ক সিয়াম আহমেদ বলেন, সুন্দরবনে ৬৫ থেকে ৬৮দিনের মতো কাজ করেছি। প্রতিদিনই তিন-চারটে স্মরণীয় ঘটনা আছে, যা বলতে গেলে শেষ হবে না। আমাদের ইউনিটটা খুবই হেল্পফুল ছিল। ইউনিট যদি সাপোর্টিভ না থাকতো, টিম ওয়ার্ক না থাকতো তাহলে আমার কাছে মনে হয় না যে এই ছবির কাজ আমরা শেষ করতে পারতাম। প্রথমেই টিমকে ধন্যবাদ জানাই। সিনেমাটি রিলিজের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হয়ে গেছে, হল সংখ্যাও বেড়েছে। আমরা তারপরও প্রমোট করছি। কারণ হচ্ছে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে আমরা ছবিটা নিয়ে যেতে চাই। খুলনা, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য ছবিটা গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনের সাথে তাদের সম্পর্কটা আত্মিক। সে জন্য আমরা তাদের কাছে এসেছি, তাদেরকে আমরা ছবিটা দেখতে দাওয়াত দিতে এসেছি। কারণ ছবিটা এখান থেকেই শুরু হলো।
নায়ক জিয়াউল রোশান বলেন, এই সিনেমাটি দেখার পর মানুষের যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা কাজ করছে যেটা আমাদের এতোদিনের কষ্ট দূর হয়েছে। র্যাবের সিনেমাটি হলেও সেটি একটি পরিপূর্ণ সিনেমা যেখানে রোমান্স, সুন্দর সুন্দর গান, সুন্দর সুন্দর কনসেপ্ট ক্রিয়েট হয়েছে, স্টোরি ক্রিয়েট হয়েছে, ইমোশন স্টোরি, যেখানে কমিডি রয়েছে। পুরোটাই একটা প্যাকেজ বলা যায় অপারেশন সুন্দরবনকে। অপারেশন সুন্দরবনের প্রতি মানুষের অধীর আগ্রহ। তিনি দর্শকদের সিনেমাটি দেখার জন্য আহবান জানান।
অপারেশন সুন্দরবন ছবির পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, এই পর্যন্ত ছবিটা যারা দেখেছে সকলের ভালো লেগেছে। আর অপনাদের কাছে প্রাণের ছবি মনে হবে। কারণ এখানে বেশিরভাগ মানুষ সাতক্ষীরা-খুলনার ভাষায় কথা বলে। খুলনার জনপদ, খুলনার সুন্দরবন, তাই এই ছবিটা খুলনাবাসীর জন্য দেখারমতো ছবি।
খুসাসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি স ম হাফিজুল ইসলাম ও কুয়েট ফিল্ম সোসাইটির টেকনিক্যাল সেক্রেটারী আকিব জুবায়ের বলেন, র্যাবের দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘অপারেশন সুন্দরবন’ টিমের অভিনেত্রী অভিনেতারা অনেক সুন্দর অভিনয় করেছেন। যে কারণে আমরা তাদেরকে সম্বর্ধনা দিয়েছি। আশা করছি এ ছবি দর্শকদের মুগ্ধ করবে।
সুন্দরবনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনরক্ষা, মৎস্য ও বনজ সম্পদের সংরক্ষণ সর্বোপরি সুন্দরবনকে বাঁচানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালায় র্যাব। সেই অভিযানে ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন জলদস্যু ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেন। সুন্দরবনে র্যাবের সেই ‘রোমাঞ্চকর অভিযান’ জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার জন্য নির্মিত হয়েছে অপারেশন সুন্দরবন। র্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড প্রযোজিত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ পরিচালনা করেছেন দীপংকর দীপন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছিল অপারেশন সুন্দরবন ছবিটির টিজার। চলতি বছরের ২৯ জুলাই মুক্তি পায় ট্রেলার। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ, নুসরাত ফারিয়া, জিয়াউল রোশান, রিয়াজ আহমেদ, দর্শনা বণিক, মনোজ প্রামাণিক, তাসকিন রহমানসহ র্যাবের বেশ কয়েকজন সদস্য।
অপারেশন সুন্দরবন’-এ সুন্দরবনে র্যাবের বিভিন্ন অভিযানের ছবি উঠে আসবে। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে একসময় দস্যুদের অবাধ বিচরণ ছিল। স্থানীয় মানুষ জীবিকা নির্বাহে ব্যাপকভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দস্যুদের ভয়ে তারা মাছ ধরতে ও মধু সংগ্রহ করতে পারত না। সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত। র্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানকে উপজীব্য করেই নির্মিত হয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’।