চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে খুলনায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ঈদুল আযহার পর নগরীতে খুলনার বাইরের মানুষ প্রবেশের পর মারাত্মক আকার ধারণ করে করোনার প্রভাব। প্রতিদিন শতশত রোগী করোনা পজেটিভ হতে শুরু করে। বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ে রোগীরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে তখন বেসরকারি হাসপাতালেও রোগী সেবা দেয়ার বিষয়ে তেমন চাপ প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি।
করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। যার বেড সংখ্যা ছিল শতাধিক। যা সংক্রমণের হারের তুলনায় ছিল খুবই নগণ্য। বর্তমানে গত ৬ মাসের তুলনায় অনেকাংশে কমে গেছে করোনা পজেটিভ রোগী। ঠিক সেই মুহুর্তে খুলনায় করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৬ টি হাসপাতালে প্রায় ৩২২ টি বেড।
কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব হাসপাতালে করোনা বেড প্রস্তত এবং সেবা প্রদান দেয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য অনেক সময় লেগেছে। এছাড়া আগামী শীতে ফের করোনার প্রভাব বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই দিকটা বিবেচনা করেও সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা যায়, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সময়কালীন থেকে গেল জুলাই মাস পর্যন্ত বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে কোন করোনা বেডের ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি করোনা টেষ্টেরও কোন সুযোগ ছিল না। যার ফলে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আসন সংখ্যা, অক্সিজেন সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে অনেক করোনা রোগী বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন অথবা উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১০-১২ জনে নেমে এসেছে। যা সংক্রমণের সব থেকে নিম্নস্তরে। অথচ ঠিক এই মুহুর্তে খুলনায় করোনা রোগীদের জন্য বেডের ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি।
খুলনা সিভিল সার্জন সূত্র জানায়, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে নগরীর নূরনগরস্থ খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালটিতে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বেডের সংখ্যা শতাধিক। খুলনা সদর হাসপাতালেও করোনা রোগীর বেড রয়েছে ৪২টি। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ৫০টি, খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০টি, গাজী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ৫০টি এবং আদ্-দীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০টি করোনা বেড প্রস্তুত আছে। গত ২০ সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি মাত্র ৩১ জন।
চলতি বছরের ১০ মার্চ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনায় প্রায় ২৬ হাজার করোনা টেষ্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ হয়েছে ৬ হাজার ২৬০জন। এসব রোগীর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৬৬৩ জন রোগী। এখন পর্যন্ত খুলনায় করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৪৪৬ জন এবং মারা গেছে ৯৩ জন।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ বলেন, নগরীতে ছয়টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য যথেষ্ট বেড প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইসিইউ এবং অক্সিজেন সরবরাহও আছে। তবে করোনা রোগীর সংখ্যা খুবই কম। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার কারণেই খুলনায় করোনা রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
খুলনা গেজেট/নাফি/এমএম