বাছাই শেষে খুলনার ৬টি আসনে ২৯ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রতি আসনে গড়ে ৫ জন প্রার্থী থাকলেও সাধারণ ভোটারদের সব আগ্রহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের নিয়ে। প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তাদের আয়, সম্পদের বিবরণ দিয়েছেন। হলফনামায় দেওয়া আয় ও সম্পদের বিবরণ নিয়ে আলোচনা চলছে ভোটারদের মাঝে।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খুলনার ৬টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে আয় ও সম্পদ বেশি খুলনা-৪ আসনের প্রার্থী আবদুস সালাম মূর্শেদীর। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন খুলনা-২ আসনের প্রার্থী শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল। সবচেয়ে কম সম্পদ ও আয় খুলনা-৬ আসনের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান মোড়লের।
আব্দুস সালাম মূর্শেদী
হলফনামায় দেখা গেছে, খুলনা-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মূর্শেদীর বার্ষিক আয় ৮ কোটি ২ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর আয় ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বর্তমানে সালাম মূর্শেদীর ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রীর ১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার এবং নির্ভরশীলের ২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে।
হলফনামায় নিজেকে পাবলিক-প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পোশাক শিল্প, বস্ত্র শিল্প, ব্যাংক, হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করেছেন আব্দুস সালাম মূর্শেদী। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
সালাম মূর্শেদীর সম্পদের মধ্যে রয়েছে তার হাতে নগদ ২৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৯৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার। গাড়ি, গৃহ সম্পত্তি ছাড়াও অন্যান্য অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের ভবন। ব্যাংকে তার ঋণ রয়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
তার স্ত্রীর কাছে ১ কোটি ৮৬ লাখ নগদ টাকা, ব্যাংকে ১৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা এবং ৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। অন্যান্য সম্পদ রয়েছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের।
শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল
খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের বার্ষিক আয় ৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। শেখ জুয়েল মেসার্স আজমীর নেভিগেশন এবং মেসার্স ফারদিন ফিসের মালিক। বার্ষিক আয়ের মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে তিনি ৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা, শেয়ার থেকে ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও ব্যাংক থেকে মুনাফা ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয় করেন।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে হাতে নগদ রয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, এক কোটি টাকার এফডিআর, তিনটি কোম্পানির শেয়ার আছে ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং কার্গো ব্যবসায় তার বিনিয়োগ ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা।
তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে পূর্বাচল নিউ টাউনে ১০ কাঠা জমি এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৭টি এবং খুলনার দিঘলিয়ায় দশমিক ৩৮ একর জমি রয়েছে এবং ঢাকায় ৩টি ফ্লাটের মালিক তিনি।
এস এম কামাল হোসেন
খুলনা-৩ আসনে এবারই প্রথম মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। তিনি মাস্টার্স উত্তীর্ণ। তার বিরুদ্ধে জরুরি বিধিমালায় একটি মামলা ছিলো। সেটিতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছিলো পুলিশ। তার পেশা ব্যবসা।
হলফনামার তথ্য বলছে, কামাল হোসেনের বার্ষিক আয় ৪৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে বছরে ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং এফডিআর ও ব্যাংক থেকে লভ্যাংশ পান ১৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় বছরে (ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী) ৩০ লাখ ৫ হাজার টাকা।
কামাল হোসেনের সম্পদ রয়েছে মোট ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার। এর মধ্যে ২০ লাখ ১৭ হাজার নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা ২৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, ৩ কোটি ৪৫ লাখ স্থায়ী আমানত, ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি, গৃহস্থালী দ্রব্য এবং ব্যবসার মূলধন ৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৮১ দশমিক ৮৪ ডেসিমেল কৃষি জমি, ৩ কাঠা অকৃষি জমি এবং ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দামের একটি দোকান রয়েছে।
কামাল হোসেনের স্ত্রী শিক্ষকতা পেশায় জড়িত। তার সম্পদ রয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার। এর মধ্যে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফ্লাট, ৩৫ লাখ ২৮ হাজার নগদ টাকা, ব্যাংক জমা ২৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। তার ছেলে-মেয়ের যৌথ নামে একটি ফ্লাট ছাড়াও তাদের ৭৭ লাখ ৪২ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে।
ননী গোপাল মন্ডল
খুলনা-১ আসন থেকে ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ননী গোপাল মন্ডল। প্রায় ১০ বছর পর আবার তাকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
হলফনামায় দেখা গেছে, ননী গোপাল মন্ডল বিএ পাশ। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা ছিলো। একটিতে তিনি খালাস, অন্যটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন। ধান, তরমুজ ও মাছ উৎপাদন ও বিক্রিকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার বার্ষিক আয় ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। আয়ের পুরোটাই আসে কৃষি খাত থেকে।
ননী গোপালের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে হাতে নগদ ৩০ লাখ ১৩ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। উপহার হিসেবে পাওয়া ১৫ ভরি স্বর্ণের মালিক তিনি।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে পৈত্রিক সূত্রে ৪ দশমিক ১৮ একর কৃষি জমি ছাড়াও ছোট ছোট ভাগে আরও অনেক কৃষি জমি রয়েছে তার। এছাড়া ১০ কাঠা অকৃষি জমি, ৬৬ শতক জমিসহ একটি ভবন, ৩২ শতক জমির ওপর পৈত্রিক বাড়ি, সাড়ে ৩ একর আয়তনের একটি মৎস্য খামারের মালিক তিনি। তার স্ত্রীর নামে কৃষি জমি রয়েছে ৩ দশমিক ৩৪ একর।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি এম এ পাশ। তার বিরুদ্ধে পূর্বে একটি মামলা ছিলো।
কৃষি ও ইট ভাটার ব্যবসাকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার বার্ষিক আয় ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতি বছর কৃষি খাত থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ইট ভাটার ব্যবসা থেকে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা হিসেবে ৬ লাখ ৬০ হাজার আয় করেন তিনি।
বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সম্পদের মধ্যে তার কাছে নগদ ৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫৫ লাখ টাকা, ৪ দশমিক ১৭ একর কৃষি জমি, কিছু অকৃষি জমি, একটি দালান ও একটি সেমিপাকা ভবন রয়েছে। ব্যাংকে তার ঋণ ১ কোটি ৯৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
রশীদুজ্জামান মোড়ল
খুলনা-৬ আসনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া রশীদুজ্জামান মোড়ল এমএ পাশ। তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে দুটি মামলা ছিলো। দুটিতেই তিনি খালাস পেয়েছেন।
কৃষি ও ব্যবসাকে আয় হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি। তার বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে বছরে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে আয় করেন ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
তার স্ত্রী শিক্ষকতা পেশায় জড়িত। তিনি বার্ষিক আয় করেন ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
রশীদুজ্জামান মোড়লের সম্পদের মধ্যে হাতে নগদ দুই লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা মাত্র ৫০০ টাকা, দশমিক ৬৬ একর কৃষি জমি, দশমিক ২৪ একর অকৃষি জমি, একটি আবাসিক ও একটি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। তার স্ত্রীর রয়েছে ৩ দশমিক ০৬ একর কৃষি জমি এবং দশমিক ২২ একর অকৃষি জমি।
খুলনা গেজেট/হিমালয়