সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের হার কমেছে। পাঁচ সিটিতে গত নির্বাচনের (২০১৮ সালে) তুলনায় এ হার ৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি কমেছে। পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এই হার আরও কমবে। পাঁচ সিটির মধ্যে তিনটির ভোটের হার অর্ধশত অতিক্রম করতে পারেনি। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতিই যথেষ্ট। সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশন গত ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরশেন নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে গাজীপুর সিটিতে ৫৮ শতাংশ। অপরদিকে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে সিলেট সিটিতে। এখানে ভোট পড়েছে ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। অতীতে এই পাঁচটিতেই নির্বাচন কাগজের ব্যালটে হলেও এবার হয়েছে ইভিএমে।
এই ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো বর্জন করেছে। তবে, ২০১৮-সহ এসব সিটির আগের সব নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেছিল।
গাজীপুর সিটি : গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গাজীপুর সিটিতে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০ জন ভোটার। এরমধ্যে বাতিল ভোট ১ হাজার ৭৯৪টি। মোট বৈধ ভোট ৫ লাখ ৭৩ হাজার ২৫৬টি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জায়েদা খাতুন দলটির মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করেন।
২০১৮ সালে এ সিটিতে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। ওই সময় ভোট পড়েছিল ৫৮ শতাংশ। গতবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির হাসান সরকারকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটের হার ছিল আরও বেশি। ২০১৩ সালে ভোট পড়েছিল ৬৮ শতাংশ। সেবার বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল মান্নানের কাছে হেরে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত আজমত উল্লা। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ সিটিতে প্রতি নির্বাচনে গড়ে ১০ শতাংশ হারে ভোট কমেছে।
খুলনা সিটি : ১২ জুন অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার খালেক নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আউয়াল হাতপাখা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে খুলনা সিটিতে ভোট পড়ার হার ছিল ৬২ শতাংশের মতো। এর আগে ২০১৩ সালে ভোট পড়েছিল আরও বেশি। সেবার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন ভোটারের মধ্যে ৩ লাখ ২ হাজার ৫১৯টি ভোট পড়ে। ভোটের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ সিটিতে ভোট পড়েছিল ৭৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বরিশাল সিটি : গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ সিটির ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৭ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৫৬টি। বরিশাল সিটি করপোরেশনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৫ শতাংশেরও বেশি। এছাড়া বরিশাল সিটিতে ২০১৩ সালে ৭২ দশমিক ১ শতাংশ, ২০০৮ সালে ভোট পড়েছিল ৮১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
সিলেট সিটি : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ভোট পড়েছে ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ সিটিতে চার লাখ ৮৭ হাজার ৮১১ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন দুই লাখ ২৭ হাজার ৮৫৯ জন। ২০১৮ সালে ভোটের হার ছিল ৬৩ শতাংশ। এছাড়া ২০১৩ সালে ভোট পড়ে ৬২ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে ভোট পড়ে ৭৫ শতাংশ।
রাজশাহী সিটি : এবার সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এ সিটিতে এবার ভোট পড়েছে ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ। এ সিটির তিন লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ ভোটারের মধ্যে এক লাখ ৯৭ হাজার ৮২৮ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। রাজশাহী সিটিতে এবার তুলনামূলক ভোটের হার বেশি হলেও এ হার এই সিটির অন্যবারের চেয়ে কম। রাজশাহীতে ২০১৮ সালে ভোটের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এছাড়া ২০১৩ সালে এ সিটিতে ভোট পড়ে ৭৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ও ২০০৮ সালে ৮১ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এদিকে সিটি নির্বাচনে ভোটের হারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। চার সিটির ভোট শেষে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় সিইসি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট পড়া ‘গুড এনাফ’। ৬০-৭০ শতাংশ হলে তা চমৎকার হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি