মহামারী করোনার কারণে খুলনার হিমায়িত চিংড়ির আন্তর্জাতিক বাজারের পরিধি প্রতি মাসেই কমছে। বিদেশী বায়াররা পঞ্চাশটিরও বেশী এলসি বাতিল করেছে। গেলো বছরের আগষ্ট মাসে দশটি দেশে এ অঞ্চলের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হলেও এ বছরের জানুয়ারী মাসে মাত্র তিনটি দেশে হয়েছে।
মহামারি করোনার কারণে গেলো বছরের ২৭ মার্চ থেকে রপ্তানির পরিমাণ কমতে থাকে। এছাড়া বাগেরহাটের রামপাল, মোংলা, খুলনার ডুমুরিয়া, শাহপুর, কপিলমুনি, পাইকগাছা, কয়রা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, পারুলিয়া ও চাপড়া আড়ত থেকে চিংড়ি আসার পরিমাণ কমে যায়। হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মোকাম থেকে কাংখিত চিংড়ি মজুদ করতে পারেনি। ফলে গেলো মৌসুমে প্রত্যেকটি হিমায়িত কারখানায় গড়ে ২০ হাজার মণ করে কম মজুত হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সূত্র জানিয়েছে, গেলো বছরের আগষ্ট মাসে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, ইতালি, ডেনমার্ক ও রোমানিয়ায় এ অঞ্চলের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়। সেক্ষেত্রে গেলো ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসে রাশিয়া, জাপান, জার্মানি ও ইউক্রেনে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে। এই সূত্র উল্লেখ করেন, করোনা মহামারির কারণে বেলজিয়াম, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্কসহ কয়েকটি দেশের বায়াররা তাদের এলসি বাতিল করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দেশিও বাজারের বাগদা চিংড়ির মূল্য কেজি প্রতি দেড়শো টাকা বেশী হওয়ায় বিদেশী বায়াররা উচ্চমূল্যে চিংড়ি কিনতে রাজি হয়নি। খুলনা থেকে গত আগষ্ট মাসে ৭০ লাখ ৭৫ হাজার ডলার ও পাচ লাখ ২৫ হাজার ইউরো মূল্যের চিংড়ি রপ্তানি হয়। সেখানে জানুয়ারী মাসে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ডলার মূল্যে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে।
ক্রিম সন রোজালা সী ফুড কর্তৃপক্ষ জানান, করোনাকালীন বিদেশে চিংড়ি রপ্তানি কম হয়েছে। তাছাড়া বিদেশি বায়াররা পুশ করা বাগদা চিংড়ি কিনতে রাজি হয় না। বিদেশী বায়াররা ৫০টি এলসি বাতিল করেছে।
চট্টগ্রাম ভেটেনেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বিভাগের প্রধান ডঃ শেখ আহমাদ আল নাহিদ তার এক প্রকাশনায় উল্লেখ করেছেন, চিংড়ির রপ্তানির বাজার ক্রম হ্রাসমান হয়ে পড়েছে, যার জন্য নানাবিধ প্রতিকূলতা ও অব্যবস্থাপনা দায়ী। তিনি তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন করোনার পূর্বে হংকং, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ও রাশিয়াতে বাংলাদেশি চিংড়ির নতুন বাজার তৈরী হয়।
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালি গ্রামের চিংড়ি চাষী মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, গেল বছর আম্পানের আঘাতে মালঞ্চ নদীর ভাংঙ্গনে খামারের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। গোলাখালিতে ৪০ বিঘা জমির খামারের ১২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তাছাড়া এ উপজেলার ধুমঘাট ঈশ্বরিপুর, দর্গাপুর এলাকায় চিংড়ি চাষীরা আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এ অঞ্চল থেকে অন্যান্য বছরের তুলনায় মাত্র ২৫ শতাংশ বাগদা চিংড়ি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুত কারখানাগুলোতে পাঠানো সম্ভব হয়।
তার দেওয়া তথ্য মতে, সাতক্ষীরার সকল উপজেলার চিংড়ি চাষীরা গেলো বছর কাংখিত দাম পায়নি। তাছাড়া করোনাকালীন পরিবহনের সংকট থাকায় মোকাম থেকে চিংড়ি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারি কারখানাগুলোতে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
খুলনা গেজেট/এনএম