সাদা, লালচে আর বাদামী রংয়ের মিশ্রণের ‘সম্রাট’ বেশ মোটাতাজা। তবে শান্ত স্বভাবের। বিশালাকৃতির সুইজারল্যান্ডের রাণীশংকর জাতের গরু সম্রাটের ওজন প্রায় ৫৫ মণ। এর দাম হাঁকানো হচ্ছে ১৮ লাখ টাকা। খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর পাবলা মোল্লা বাড়ির মোড়ের মধুমতি ডেইরি ফার্মে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে সম্রাটসহ ১৫টি গরুকে।
যার মধ্যে ৮টি বড় সাইজের গরু রয়েছে। সম্রাট ছাড়াও ডন, টাইটানিক, ট্রাম্প, জেমস, মাফিয়া ডন, নবাব ও বাদশা বাহারি নামের ৭টি গরু রয়েছে। ডেইরি ফার্ম হলেও দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি কোরবানির গরু মোটাতাজা করা হয় ফার্মটিতে।
ফার্মের মালিক শামীম শেখ বলেন, ফার্মে ৭৫টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কোরবানির ষাঁড় এবং বাকিগুলো দুধ দেওয়া গরু। যারমধ্যে সবচেয়ে বড় গরু সম্রাটের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৮ লাখ টাকা এবং ট্রাম্পের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া তার ফার্মে বড় সাইজের আরও ৭টি গরু আছে। গরুগুলোর কোনটি গরু ৮০০ কেজি, ৯০০ কেজি, ১২০০ কেজি ওজন রয়েছে।
সম্রাটের বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছর সম্রাটকে গাবতলীর হাটে নেওয়া হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম ওঠেনি। যে কারণে তাকে ফেরত আনা হয়। গরুগুলো এবার চট্টগ্রাম হাটে নেওয়া হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও আশা করছি গরুগুলো বিক্রি হবে।
এ রকম নাম রাখার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সহজে গরুগুলো চেনা যায় এবং হিসাব রাখতে সুবিধা হয়। তাই ভালো লাগা থেকে এ ধরণের নাম রাখা হয়েছে।
ফার্মের কর্মচারীরা জানান, ৫ বছর আগে এই খামারের শুরুতে ১৪টি গরু আনা হয়েছিল। এখন ৪ প্রজাতির (রাণীশংকর, ফ্রিজিয়ান, ভারতীয় ও দেশি) ৭৫টি গরু রয়েছে খামারে। এই সময়ের মধ্যে বেশকিছু গরু বিক্রি করা হয়েছে। এটি দুগ্ধ খামার। এখানে এবার কোরবানি ঈদের জন্য ১৫টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব গরুর নামও রাখা হয়েছে। তবে আকার-আকৃতি, গঠন, রং, স্বভাব, চেহারা সবদিক থেকে আকর্ষণীয় হচ্ছে সম্রাট। যে কারোরই পছন্দ হবে। গত ঈদে সম্রাটকে রাজধানীর গাবতলী হাটে নেওয়া হয়েছিল। তবে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করা হয়নি। এবার আশা করছেন হাটে নেওয়ার পরই বিক্রি হবে। ট্রাম্পও ভালো দামে বিক্রি হবে।
ফার্মের কর্মচারী মো. হুমায়ুন গাজী বলেন, ফার্মে কোরবানির জন্য ১৫টি গরু রয়েছে। এরমধ্যে সম্রাট ও ট্রাম্প সবচেয়ে বড়। এখানে বিশাল বড় বড় গরু রয়েছে। এরকম বড় ফার্ম খুলনা শহরের আর কোথাও নেই।
তিনি আরও বলেন, গরুগুলোকে সাধারণ খাবার যেমন- সয়াবিনের খৈল, মুগ ভুসি, গমের ভুসি, ভুট্টার আটা, কুড়ো, বিচালী ও পাশাপাশি নিজেদের ফার্মে উৎপাদিত কাচা ঘাস খাওয়ানো হয়।
তিনি বলেন, গরুগুলোর পেছনে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়। সম্রাট খুবই আদরের। সম্রাট চলে গেলে সবাই কাঁদবে।
ফার্মে ঘুরতে আসা মো. বেলায়েত শেখ বলেন, খুলনা জেলায় বড় বড় গরু আছে শুনেছি। কিন্তু এই ফার্মে এতো বড় বড় গরু আছে আগে দেখিনি। এবার আসলাম গরু দেখতে। এখানে অনেকেই আসে। ফার্মে সম্রাটসহ বিভিন্ন নামের গরু আছে৷ দেখতে খুব সুন্দর, গরুও বিশাল বড়। শুনেছি হাটে নিয়ে যাবে, তাই দেখতে এসেছি।
ফার্মে আসা ফরিদুজ্জামান বাবু বলেন, অনলাইনে বড় বড় গরু দেখি। জানতে পেরেছি এখানে বড় একটি ফার্মে বড় বড় গরু রয়েছে। এটা দেখার জন্য এখানে এসেছি। ডনসহ বিভিন্ন নামের বড় বড় গরু আছে। শহরের উপরে এতো সুন্দর একটি ফার্ম হতে পারে এটা না দেখলে বুঝতাম না।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম আইয়ুব আলী বলেন, এ বছর ৮৯ হাজার ৮৬৭ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। আর খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ৯২ হাজার ৩৭৫টি। ফলে এবার কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত আছে। ফলে পশুর কোনো সংকট হবে না।