আজ ১৩ জুলাই, ২০২৩। খুলনা গেজেট পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে একজন পত্রিকাপাঠক হিসেবে খুলনা গেজেট পত্রিকা পরিবারের সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানাই। কারণ, এদের অব্যাহত পরিশ্রমের ফলে এ পত্রিকা গত তিন বছরে বস্তুনিষ্ঠভাবে সমসাময়িক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
বিভাগীয় শহর খুলনার পত্রিকাজগত আমার কাছে অন্ধকার মনে হয়। খুলনার মতো চট্টগ্রামও বিভাগীয় শহর। চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী হতে প্রকাশিত পত্রিকার মানের মতো বেশ কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে দৈনিক আযাদী, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকাগুলোর নাম উল্লেখ করা যায়। এ পত্রিকাগুলোর পৃষ্ঠাসংখ্যা ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর পৃষ্ঠাসংখ্যার মতো।
কলামের পাতা আছে, আছে সাহিত্যের পাতা। কিন্তু খুলনা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো আমার কাছে প্রত্যাশিত মানসম্পন্ন মনে হয় না। এগুলোর চার পৃষ্ঠার শরীর থেকে বিজ্ঞাপনে ব্যয়িত এক পৃষ্ঠা বাদ দিলে থাকে তিন পৃষ্ঠা। কোনো অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপা হয় না। কলামের পাতা নেই। এগুলোকে কিভাবে মানসম্পন্ন পত্রিকা বলবো? খুলনার লেখকসমাজ লিখবেন কোথায়? খুলনায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি উঁচু হয়েছে। কিন্তু পত্রিকার মান উঁচু হয়নি।
খুলনা থেকে প্রকাশিত পত্রিকার মানের চেয়ে কতিপয় জেলা শহর থেকে অধিকতর মানসম্পন্ন পত্রিকা প্রকাশিত হয়। খুলনার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব খুলনার ব্যাপক উন্নয়নের বুলি আওড়ালেও প্রকাশিত পত্রিকার মান বিবেচনা করে ওই উন্নয়নের দাবি একজন খুলনাবাসী হিসেবে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত পত্রিকাগুলো বিশিষ্ট শিল্পপতিদের সহযোগিতায় প্রকাশিত হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রথম আলো, যমুনা শিল্পগোষ্ঠীর যুগান্তর, গ্লোব শিল্পগোষ্ঠীর জনকন্ঠ, বসুন্ধরা শিল্পগোষ্ঠীর কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দ্য ডেইলি সান, র্যাংগস গ্রুপের সকালের খবর প্রভৃতি পত্রিকার নাম উল্লেখ করা যায়।
খুলনায়ও শিল্পপতি ও বিত্তবান ব্যক্তিত্ব আছেন। এখানে আফিল গ্রুপ আছে। আকিজ গ্রুপ আছে। আছেন সালাম মুর্শেদী, খালেক তালুকদার প্রমুখ। এরা পত্রিকা প্রকাশ করছেন না কেন? স্থানীয় সাংবাদিকগণ এদেরকে একটি মানসম্পন্ন পত্রিকা প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন কেন? খুলনা থেকে মানসম্পন্ন পত্রিকা প্রকাশে খুলনার সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের অধিকতর আন্তরিকতার সাথে উদ্যোগী হওয়া উচিত।
এই প্রতিকূল পরিবেশে অনলাইন পত্রিকা হিসেবে খুলনা গেজেট এর আবির্ভাব ও তিন বছর মান বজায় রেখে পাঠকের চাহিদা পূরণ করা একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ঘটনা। এই তিন বছরে খুলনা গেজেট সমসাময়িক সংবাদ পরিবেশনে দৃষ্টান্তমূলক নজির স্থাপন করেছে। পত্রিকাটি এখন অনলাইনে বহুলপঠিত। বৃহত্তর খুলনার খবরাখবর জানতে আমি নিজেও খুলনা গেজেট পড়ে উপকৃত হই। আমি পরামর্শ দেব, খুলনা গেজেট কর্তৃপক্ষ অনলাইন ভার্সনের পাশাপাশি একটি মানসম্পন্ন প্রিন্ট ভার্সন প্রকাশে উদ্যোগী হবে।
আমি আশা করব, খুলনার মানসম্পন্ন পত্রিকার ঘাটতি পূরণে খুলনার বিত্তশালী ব্যক্তিত্ব ও শিল্পপতিগণ খুলনা গেজেটের পাশে দাঁড়াবেন। তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে খুলনা থেকে একটি মানসম্পন্ন পত্রিকা প্রকাশে অবদানমূলক ভূমিকা রাখবেন।
খুলনা গেজেট-এর তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার মতো একজন বর্ণহীন সাধারণ শিক্ষককে স্মরণ করায় আমি খুলনা গেজেট পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং এ পত্রিকার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
লেখক: অধ্যাপক, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল : akhtermy@gmail.com
খুলনা গেজেট/এমএম