খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

খুলনার পিসি রায়ের মৃত্যুর পর কলকতার গণমাধ্যম

বরেণ্য রসায়ন বিজ্ঞানী পিসি রায় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামের জমিদার পরিবারের সন্তান। ১৬ জুন তার মৃত্যুবার্ষিকী। পরাধীন ভারতে ১৯৪৪ সালের এ দিনে ইহলোক ত্যাগ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বড় পরিচয় তিনি মার্কিউরাস নাইট্রাইটের আবিস্কারক। ৮৩ বছর তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন। বিচিত্র প্রতিভাধর মানুষ।

তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনায় আমাদের নির্বাহী সম্পাদক কাজী মোতাহার রহমান।

তার মৃত্যুর পর কলকতার একাধিক পত্র পত্রিকায় সম্পাদকীয় ও শোক বার্তা প্রকাশিত হয়। মাসিক বসুমতির (আষাঢ় ১৩৫১) শোকবার্তায় বলা হয় বাংলার শেষ সুবর্ণ – দেউটি আজ নির্বাপিত। জাতীয়তার মূর্ত প্রতীক ত্যাগ ও কর্মে সমুজ্জ্বল জীবনের অবসান ঘটল। আচার্যদেবের মন দেশের জন্য, দরিদ্র্যের জন্য সব সময় ব্যাকুল থাকত। সরকারের স্যার উপাধি দানের পরও দেশের মানুষ তাকে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র বলে জানত। তার স্বদেশ প্রেম ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বিজ্ঞান- প্রেমকেও ছাপিয়ে গেছে। দুর্ভিক্ষ ও বন্যা হলে তিনি ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বের হতেন মানুষের কাছে। দরিদ্যের কষ্টের লাঘব, ছাত্রদের সুখ সুবিধা, দেশবাসীর উন্নতি এসব নিয়েই তার জীবন। এমন সহজ, সরল অথচ শক্তিমান পুরুষ সত্যিই দুর্লভ। তিনি চেয়েছিলেন বাঙালি নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখুক। স্বাধীন হতে হলে পরমুখাপেক্ষী হওয়া চলবেনা। বাংলাদেশ তার কাছে ঋণী। তিনি যে দীপ শিখা জ্বালিয়ে গেছেন, সে শিখা যেন নির্বাপিত না হয়।

প্রবাসী পত্রিকায় শোক বার্তায় উল্লেখ করা হয় তার গৌরবদীপ্ত জীবনের অবসানে উনবিংশ শতাব্দীর সাথে বাঙালির শেষ যোগসূত্র ছিন্ন হল। ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রে তার গবেষণা অতুলনীয়। ১৫ বছর কলকতা বিজ্ঞান কলেজে বিনা পারিশ্রমিকে রসায়ন বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন। এ দেশের বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগেও তিনি পথ প্রদর্শক। মানব সেবা ব্রত আচার্যদেবের তুলনা বিরল।

দৈনিক আনন্দ বাজরের শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়, আচার্য প্রফুল্ল চন্দের জীবন তার ব্যক্তিগত সীমা অতিক্রম করে জাতীয় সাধনার প্রতীক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। জীবনের এ অপরিসীম বিস্তৃতি প্রথম হতে অনুভব করেছিলেন বলেই হয়ত সংকীর্ণ সাংসারিক সম্বন্ধের মাত্রা তিনি সহজে এড়িয়ে গেছেন। স্বদেশ ও স্বজাতির মঙ্গল কামনায় ব্যক্তিগত আকাঙ্খা বলি দিয়েছিলেন। সংসারে থেকেও সংসার ত্যাগী চিরকুমার জীবনের মহাসমাপ্তির দিকে চেয়ে প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে যেন উপলদ্ধি করছে ভারতবাসীর শ্রদ্ধাপ্লুত হৃদয়ে তিনি অনুরুপ আসন অধিকার করবেন (রনজিৎ কুমার মন্ডল রচিত আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়)।

দেশ পত্রিকায় প্রফুল্ল চন্দ্র শিরোনামের প্রবন্ধে বলা হয়েছে তিনি বিজ্ঞানী ছিলেন। তার বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে।

১৯৪৪ সালের ২১ জুন জনযুদ্ধ পত্রিকায় বলা হয় ৮৩ বছর আগে তখন বাংলাদেশ অনগ্রসর ছিল। সেই অতীতে পিসি রায় জন্ম নেন। তার মৃত্যুতে কমিউনিস্ট পার্টি দলীয় পতাকা অর্ধনর্মিত রাখে।

১৯৫১ সালের আষাঢ়ে শনিবার নামক পত্রিকায় বলা হয়, পিসি রায়ের জীবন চমকপ্রদ হলেও তার আদর্শ জীবন। বিদ্যাসাগরের পর এত বড় আদর্শবান জীবন আর দেখা যায়নি। রসায়ন বিজ্ঞানে তার দান বিশ্বের বিজ্ঞানীরা শ্রদ্ধাভরে স্বীকার করেন। তার বিজ্ঞান গবেষণা ও মার্কিউরাস নাইট্রাইট আবিস্কার পৃথিবীতে উদাহারণ হয়ে আছে (গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনী রচিত আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের অন্তর্ধানে সংবাদপত্রের কথকতা)।

খুলনা গেজেট/ এস আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!