দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতিতে এক সময়ে তাদের দু’জনেরই ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। দল গোছানো, পরিচালনা, চরম দুর্যোগে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি আন্দোলন সংগ্রাম, হামলা-মামলা, কারাবরণ সবই করেছেন দলের কারণে। দলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন সমান জনপ্রিয়। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়ভাবে দলে সফল নেতৃত্ব দেয়ায় হয়েছিলেন সংসদ সদস্যও। তাদের একজন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, অপরজন বিএনপি খুলনা মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা মিজানুর রহমান মিজানকে সবশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিতে দায়িত্বশীল পদ না দেয়ায় এই দুই নেতাই এখন রাজনীতি থেকে দৃশ্যত দূরে।
বর্তমানে কেমন আছেন দেশের প্রধান এই দুই দলের শীর্ষ স্থানীয় দুই সাবেক নেতা? কিভাবে কাটছে তাদের দিন ?
মিজানুর রহমান মিজান পর্যায়ক্রমে যুবলীগের খুলনা নগর কমিটির আহবায়ক, সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান করে নেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাংগঠনিক দক্ষতায় ২০০১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ খুলনা নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন টানা ১৮ বছর। খুলনা-২ আসন থেকে ২০১৪ সালে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি।
অন্যদিকে ১৯৮৩ সালে ছাত্রদলের আহবায়কের দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে যাত্রা শুরু নজরুল ইসলাম মঞ্জুর। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় যুবদলের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করায় ১৯৮৯ সালে বিএনপি শহর শাখার যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পাড়া-মহল্লায় দল ও নেতাকর্মীদের সংগঠিত, দুঃসময় দলের নেতৃত্ব দেন টানা ১৬ বছর নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে। এরপর দলের প্রয়োজনে সভাপতির হালধরে একযুগ কর্মীদের নিয়ে রাজপথেই ছিলেন তিনি। গত ১২ বছরে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন। করেছেন কারাবরণও। ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বিএনপি যে ২৯টি আসন পেয়েছিল তার একটির দখলে নিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
দলীয় নানা সমীকরণ, অভ্যন্তরীণ জটিলতার পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজ সংকটের কারণে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হাতছাড়া হয় মিজানের। এরপর থেকে খুলনা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে কোনঠাসা হতে থাকেন তিনি। দলীয় কোনো কমসূচিতে তেমন একটা দেখা যায় না এক সময় খুলনা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতাকে।
অন্যদিকে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনা নগর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বাদ দিয়ে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এখানেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কেন্দ্রীয় কিছু নেতা একজোট হয়ে মঞ্জু হটাও রাজনীতি সফলতা পায় বলে অভিযোগ তৃণমূল কর্মীদের। দলের এহেন সিদ্ধান্তকে হটকারী ও নতুন কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করার মন্তব্যে ১৯ ডিসেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে। বর্তমানে খুলনার রাজনীতিতে এক সময় সবচেয়ে সফল ও দাপুটে থাকা এই দুই নেতার সময় কাটে অনেকটা একাকিত্বে।
নিজ নিজ অবস্থান থেকে পৃথক বলয় তৈরি করে সাংগঠনিকভাবে দলকে সংগঠিত করে নেতৃত্ব দেয়া এই দুই রাজনীতিবিদ মনে করেন, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা তাদেরকে মূল্যায়নের পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে অনুভব ও অনুধাবণ করবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বাড়িতেই তার অধিকাংশ সময় কাটে। সকালের দিকে যারা আসেন তাদের সাথে কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পুরানো মানুষগুলোকে মূল্যায়িত করতে হবে। তাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। আর তাদের সামনে নিয়ে আসার কারণে এই সমস্ত আগাছা পরগাছা দূরে চলে যাবে।
অন্যদিকে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, কঠিন সময় পার করছেন। তারপরও মেনে নিয়েছেন দলের সিদ্ধান্তকে। এখন বই পড়ে এবং পরিবারকে সময় দিয়ে ও নানা ধরণের সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, জনবিচ্ছিন্ন গণবিরোধী মানুষদেরকে রাজনীতে থেকে আমরা তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। ৪৪ বছরের মাথায় এসে সেই বিএনপিতে যদি এখন দুর্বৃত্তায়ন ঘটে, দুর্নীতিবাজদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় সেটি আমাদের জন্য পীড়াদায়ক।
খুলনা গেজেট/ এস আই