ইংরেজী নতুন বছর গণমাধ্যম জগতে দুঃসংবাদই বয়ে আনে। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান টিভি সাংবাদিক বারবারা, ওয়াল্টারস মারা গেছে। ১৯৬১ সালে এবিসি নিউজে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু। যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন অঙ্গনে তিনি নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। ৫২ বছরের সাংবাদিকতা জীবন। সাহসিকতার সাথে এ পেশায় ছিলেন। তার মৃত্যুর সংবাদে যুক্তরাস্ট্রের সাংবাদিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
সংবাদপত্রের পাতায় এ সংবাদ পড়ার সময় আরও একটি দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে আসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আব্দুর রহমানের মৃত্যুর খবর। বছরের শুরুতেই সাংবাদিকদের জন্য শুধু দুঃসংবাদই ঘিরে বসে। বছরের প্রথম দিন খুলনার সাংবাদিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৈনিক পূর্বাঞ্চলের বার্তা সম্পাদক অরুন সাহার মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নতুন বছরের আনন্দটা যেন খানিকটা ম্লান হয়ে যায়। তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয় গণমাধ্যমে তিনি সংবাদ শিরোনাম হন। যে মানুষটি ২৪ ঘন্টা আগে নানা সংবাদের শিরোনাম রচনা করেছেন, তিনিই হলেন সংবাদ শিরোনাম।
স্থানীয় দৈনিকগুলোতে তার মৃত্যুর সংবাদ অনেক গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার পর তার নিথর দেহ প্রেসক্লাব অঙ্গণে আনা হয়। নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করা হয়। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তার সুহৃদরা, স্বজনরা ও সহকর্মীরা। সবাই ছিল ভারাক্রান্ত হৃদয়ে। প্রেসক্লাব অঙ্গণে নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ তাকে শেষবারের মত দেখতে যেভাবে ভিড় করেছিল তাতে মনে হয়েছে তিনি পাঠকের কাছে অনেক জনপ্রিয় ছিলেন।
প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলতে হয়, সাপ্তাহিক পদধ্বনির মাধ্যমে তার পেশাগত জীবন শুরু। মরহুম সাইদুর রহমান এ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। তিনিও সাদামনের মানুষ। যৌবনে বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত হলেও পত্রিকার সম্পাদক শেষদিকে এসে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শণে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। মতাদর্শ যাই থাকুক তিনি ভিন্ন মতকে প্রাধান্য দিতেন। এ পত্রিকা থেকে গড়ে উঠেছে অনেক খ্যাতিমান সাংবাদিক। তার মধ্যেই একজন প্রয়াত অরুন সাহা।
স্মৃতির পাতা উল্টে বলতে হয়, ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরের এক বিকেলের কথা। মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজে ছাত্রলীগের (বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র) কর্মীসভা চলছিল। সেদিনের তরুণ সংবাদ কর্মী অরুন সাহা এসেছিলেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য, নোটবুক ও কলম হাতে নিয়ে। তার মধ্যে প্রগতিশীল চিন্তার মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়। তথ্য নিয়ে একটি চমৎকার সংবাদ পরিবেশন করেন পদধ্বনির পাতায়। সেই থেকে গভীর সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। শেষপর্যন্ত গড়ায় সহকর্মীর সম্পর্কের পর্যায়ে।
সাপ্তাহিক পদধ্বনির পর জন্মভূমি পরবর্তীতে দীর্ঘসময় কেটেছে তার দৈনিক পূর্বাঞ্চলে। মাঝে কিছুদিন ঢাকার দৈনিক আলামিনেও কাজ করেছেন। প্রায় ৪০ বছর পূর্বঞ্চেলের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে। এ দীর্ঘসময়ের মধ্যে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার জন্য পদের কোন পরিবর্তন হয়নি। দীর্ঘসময় নিবেদিত প্রাণ হিসেবে সংবাদপত্রকে সেবা করেছেন। বলা চলে ১৯৮২-১৯৯০ পর্যন্ত জেঃ এরশাদের সামরিক শাসনে মধ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে সাংবাদিক ইউনিয়নের পাশে দাড়িয়ে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করেছেন। সেদিনের ১৫ দল, ৭ দল ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সংবাদগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছেন। এই সময়েই পূর্বাঞ্চল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর তার পেছনে সম্পাদকের পাশাপাশি অসামান্য অবদান ছিল প্রয়াত অরুন সাহার। নিরহংকার এই মানুষটি সংবাদপত্রকে সেবা দিয়ে গেছেন। দীর্ঘসময় রোগে-শোকে না ভুগে নীরবেই চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে।
এই নীরব সংবাদপত্র সেবীর দীর্ঘ কর্মজীবনের ত্যাগ, শ্রম ও মেধার জন্য গভীর শ্রদ্ধা। তার কর্মময় জীবন খুলনার গণমাধ্যমে একটি স্থান দখল করে থাকুক এটাই কামনা।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, খুলনা গেজেট।