আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দেশের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠণ ‘অধিকার’ খুলনা ইউনিটের উদ্যোগে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও র্যালীর আয়োজন করা হয়।
এ কর্মসূচিতে অংশ নেন পতিত হাসিনা সরকারের সময় গুমের শিকার এবং পুলিশ কর্তৃক চোখ উপড়ানো তিনটি পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যরা কেউ প্রিয় সন্তান ও ভাইকে ফেরত চান। আর দু’ চোখ হারানোর যন্ত্রণাদায়ক ও লোমহর্ষক সেই ঘটনার বর্ননা দিয়ে শাহজালাল প্রশ্ন ছুড়ে দেন- তার চোখ দু’টি গেল কোথায়।
এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের খুলনার ফোকাল পার্সন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী মুহাম্মদ নূরুজ্জামান। অধিকার’র বিবৃতি পাঠ করেন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার সাংবাদিক কে. এম জিয়াউস সাদাত।
বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও আইন-শৃংখলা বাহিনী এবং প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। বিশেষ করে ‘আয়না ঘর’ নামক কথিত বন্দিশালার নায়ক এবং হেফাজতে নির্যাতন ও গুমের সঙ্গে জড়িতরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। গুমের শিকার ব্যক্তিরা সকলে ফিরে আসেনি। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের ফিরিয়ে দেওয়া এবং গুমের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশে উল্লেখ করা হয়, কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত জনগণকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায়। সে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে দমন-নিপীড়নের পথ বেছে নেয়। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপকভাবে রূপ নেয়। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমন করতে হাসিনা সরকার নজিরবিহীন মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং ক্ষমতাসীনদলের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ছোঁড়ে। এতে শিশুসহ ১ হাজার ৫৮১ জন নিহত, ১৮ হাজার আহত এবং ৫৫০ জনের চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি মানবাধিকার সংগঠন‘অধিকার’ মানবাধিকার সংক্রান্ত কর্মকা-পরিচালনা করতে গিয়েও হাসিনার শাসনমলে চরম রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও হয়রানির সম্মুখিন হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ৮ আগস্ট একটি অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতীয় শাসকগোষ্ঠি সাবেক কর্তৃত্ববাদী সরকারের পক্ষ অবলম্বন করে বিভিন্নভাবে এই অভ্যুত্থানকে এবং অন্তর্র্বতী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় রত হয়েছে। এই সময়ে ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রচারনা চালাচ্ছে। ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা চালানো হয়েছে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। মানববন্ধন থেকে বাংলাদেশের ওপর ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব ও আমাদের দেশ’র খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের খুলনার আহবায়ক এম হুমায়ুন কবির, খুলনা জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক মুনীর চৌধূরী সোহেল, সাতক্ষীরা জেলা নারী ও শিশু আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট শেখ আলমগীর আশরাফ, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে), খুলনার কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরো প্রধান আব্দুর রাজ্জাক রানা, নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা’র নগর সভাপতি শেখ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বৃত্তহর খুলনাবাসী’র সাধারণ সম্পাদক সরদার আবু তাহের, ছায়াবৃক্ষের প্রধান নির্বাহী মাহবুব আলম বাদশা, গুমের শিকার সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান জনি’র বৃদ্ধ পিতা শেখ আব্দুর রাশেদ, নগরীর নিরালা কাশেম নগর এলাকার গুমের শিকার আবুল কালাম আজাদ বাবু’র ভাই মো. জাহাঙ্গীর হোসেন লিখন, পুলিশ কর্তৃক চোখ উপড়ানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহজালাল হাওলাদার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মো. মিরাজুল ইসলাম ইমন।
উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক খুলনাঞ্চল সম্পাদক ও প্রকাশক মিজানুর রহমান মিল্টন, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সম্পাদক বরকত আলী, অব. ব্যাংক কর্মকর্তা মো. মাহাবুব হোসেন, খুলনা জেলা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি শেখ ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম মতি, মিশারুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী এম এ আজিম, এস এম জসিম উদ্দিন, মো. রাজু হাওলাদার, ইমাম ও শিক্ষক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ, পিপি সহকারী মো. নজরুল ইসলাম, ছায়াবৃক্ষের নাদিম হোসেন, শাহজালালের স্ত্রী রাহিলা বেগম, স্বজন তন্নী আক্তার, আবুল কালাম আজাদ বাবু’র স্ত্রী নিলুফা বেগম, মা আলেয়া বেগম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক এমন মোল্লা, কলেজ শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা, মো. সাব্বির, তাওহিদুল ইসলাম, মো. আফ্রিদি, গালিব হাসান, এমডি রায়হান ইসলাম, নুর মুহাম্মদ, অন্তর মৃধা, মো. গিয়াস উদ্দিন, শাহাজামাল রুমি, রিফাত আল হাসান, নেহা, আবির প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে একটি র্যালী নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
খুলনা গেজেট/এএজে