খুলনায় অব্যাহত খুন, সন্ত্রাস ও মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়ার অভিযোগ তুলে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে মহানগর বিএনপি। রোববার (১৩ জুলাই) বিকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা।
খুলনা মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুবদলকর্মীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংস ও নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। মামলার এজাহারে খুনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিন খুনিকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। ঘটনার পর ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, খুনিদের খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি কেন মূল আসামিদের গ্রেফতার করা গেল না, এটা এক বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এরই অংশ হিসাবে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনা বেছে নিয়েছে একটি গোষ্ঠী।
বক্তারা বলেন, এই ষড়যন্ত্রকারীদের মূল টার্গেট বিএনপি। পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য একটি চক্রটি এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যবহার করছে। ওই চক্র বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ট্যাগ দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যা দেশের গণতন্ত্র ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য ভয়ংকর অশনিসংকেত।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান অর্ন্তরবর্তী সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্নের নির্দেশ দেয়ার পর দেশবিরোধী চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ধরণের পায়তারা করছে। তারা চায় না বাংলাদেশে সুষ্ঠ নির্বাচন হোক। ঢাকায় যুবদল কর্মী সোহাগ ও খুলনার মাহবুব হত্যাকান্ড ওই চক্রের ষড়যন্ত্রের ফসল। যারা নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পায় এবং নানা অজুহাতে নির্বাচন পেছাতে চায়, তারাই দেশকে অশান্ত করতে চাইছে। রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার মূল আসামিদের গ্রেফতার না করে মামলার এজাহার থেকে প্রধান তিন আসামিকে বাদ দেওয়া ‘রহস্যজনক’ বলে প্রশ্ন তুলেছেন খুলনা বিএনপি। প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে সুযোগসন্ধানী বিশেষ গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিলেক্টিভ প্রতিবাদ করে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ও তীব্র কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বিবৃতি দেওয়া শুরু করেছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরাজিত গোষ্ঠী যারা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তরণ চায় না তারা এই সুযোগটি গ্রহণ করে বিএনপি এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে। তারা চায় দেশে আরও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। সরকারের একটি অংশ তাদের এই দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনার ফাঁদে পা দিয়ে অপরাধ দমনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
বিএনপি নেতারা বলেন, আমরা বারবার অনুরোধ করার পরেও খুলনার পুলিশ প্রশাসন দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ১০ মাসে নগরীতে ২৮টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুবদলকর্মীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংস কায়দায় নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। এমন নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে সমগ্র জাতি আজ স্তম্ভিত। কিন্তু যারা প্রাণঘাতী আঘাতগুলো করেছে তারা অদ্যাবধি গ্রেফতারও হয়নি। এর কারণ বোধগম্য নয়। খুন হয়েছে যুবদল কর্মী আর দেশব্যাপী বিচারের দাবিতে মিছিল করেছে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা। ১৭ বছর মামলা হামলার কাছে মাথানত না করে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিলো। কিন্তু কথিত শিশুপার্টি ও স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা একত্রিত হয়ে পতিত স্বৈরাচার সরকারের পথে হাটছে। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে বিএনপি বসে থাকবে না বলে বক্তারা হুশিয়ারি উচ্চরণ করেন।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে একমাস বিএনপির নেতাকর্মীরা খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন ধর্মীয় ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পাহারা দিয়েছে। ওই সময়ে খুলনায় কোন হত্যাকান্ড ঘটেনি। কিন্তু বর্তমান পুলিশ কমিশনার দায়িত্ব নেয়ার ১০ মাসে খুলনায় ২৮টি হত্যকান্ড সংগঠিত হয়েছে। আমরা এসব হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছি, মিছিল করেছি, স্মরকলিপি দিয়েছি কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাতে কোন ধরণের কর্ণপাত করেনি। দৌলতপুরে যুবদল নেতা মাহবুব হত্যাকান্ডের দায় খুলনার পুলিশ কোনভাবেই এড়াতে পারে না। খুলনার মানুষের কাছে এটা স্পষ্ট ৭১ এর পরাজিত শক্তি যারা পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে আত্মগোপন ছিলো, ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে হাসিনার পতনের পর ওই গুপ্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে এসেছে। মাহবুব হত্যার পর তার পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে। কারা রগ কাটে দেশের মানুষ তা জানে। বিএনপি পুলিশ প্রশাসনকে সঠিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে খুনিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আরো বলেন, তদন্তের নামে টালবাহানা করলে খুলনার মানুষ বসে থাকবে না। সরকার ঘোষিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে চিরুনি অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে অভিযানের নামে নিরীহ মানুষদের হয়রানি না করার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। বক্তারা আরো বলেন, সামান্য কিছু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীর অপচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক যথাক্রমে শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ বাবু, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ, রেহানা ঈসা, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, এড. শেখ মোহাম্মাদ আলী বাবু, মুর্শিদ কামাল, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, শেখ ইমাম হোসেন, আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস, মিজানুর রহমান মিলটন, নাসির উদ্দিন, যুবদলের আব্দুল আজিজ সুমন, রবিউল ইসলাম রুবেল, জাসাসের ইঞ্জি. নুর ইসলাম বাচ্চু, এম এ জলিল, নিশাত জামান, স্বেচ্ছাসেবক দলের মিরাজুর রহমান মিরাজ, মুন্তাসির আল মামুন, শ্রমিকদলের মজিবর রহমান, শফিকুল ইসলাম শফি, কৃষকদলের আক্তারুজ্জামান সজিব তালুকদার, আদনান ইসলাম দ্বীপ, মহিলা দলে সৈয়দা নার্গিস আলী, এড. হালিমা আক্তার খানম, ছাত্রদলের তাজিম বিশ্বাস, সৈয়দ ইমরান হোসেন, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, নাজিম উদ্দিনসহ বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কেডি ঘোষ রোড, পিসি রায় রোড, যশোর রোড হয়ে ফেরিঘাট ঘুরে স্যার ইকবাল রোড দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এসময় মিছিলকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
খুলনা গেজেট/এমএম