খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ পৌষ, ১৪৩১ | ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ

খুলনায় বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির যাত্রা শুরু

একরামুল হেসেন লিপু

“Technology for progress” এই মূলমন্ত্রকে ধারন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিচালিত দেশের ৪ টি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে BAUST Khulna অন্যতম একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর মধ্য দিয়ে খুলনায় যাত্রা শুরু করেছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে খুলনায় ব্যতিক্রমধর্মী প্রযুক্তি নির্ভর বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। BAUST Khulna বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিচালিত ৪র্থ তম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৫ সালে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট সৈয়দপুরে নিজস্ব ক্যাম্পাসে সর্বপ্রথম তাদের প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এরপর কুমিল্লা এবং নাটোরের কাদিয়াবাদে এ জাতীয় দু’টি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। সর্বশেষ খুলনায় তাদের কার্যক্রম শুরু হলো।

খুলনায় আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান খুলনা যশোর মহাসড়কের শিরোমনি বাজার অতিক্রম করার পর সড়কের ডান পাশে পাঁচতলা বিশিষ্ট সুসজ্জিত একটি ভবন। এটি BAUST Khulna ‘র অস্থায়ী ক্যাম্পাস ।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর খুলনায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম অনুমোদন পাওয়ার পর উক্ত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এ বছরের শুরু থেকে প্রথম ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম সেশনে শুধুমাত্র কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নিয়ে ক্লাস শুরু হলেও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আরও ৫ টি বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভাগগুলি হলোঃ
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এমই), সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিই), ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) ও ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মেহেদী রহমান রানা খুলনা গেজেটকে বলেন, ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদন পাওয়ার পর এ বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে শিরোমনিস্থ অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। এছাড়া পরবর্তী সেশন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আবেদনের শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২১,২০২২ ও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে যে সকল শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বমোট জিপিএ ৭ পেয়েছেন সে সকল শিক্ষার্থীরাই শুধুমাত্রআবেদন করতে পারবেন।

মেহেদী রহমান আরো বলেন, ভবিষ্যতে টেকনোলজি বিষয়ে আরো কিছু ডিপার্টমেন্টসহ কলা অনুষদের বিভাগসমূহ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস করানো হয়। খুব শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- ছাত্রীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা এবং আবাসন সুবিধা চালু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাকটিক্যালের জন্য প্রত্যেক বিভাগের আধুনিক ও উন্নত মানের ল্যাব রয়েছে। এছাড়াও আমাদের মেটালার্জিক্যাল ল্যাব এবং হিট ট্রান্সফার ল্যাব করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বুধবার (৮ মে) সরজমিনে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ভবন ঘুরে দেখা যায়, খুবই সাজানো গোছানো, পরিচ্ছন্ন এবং আকর্ষণীয় একটি ভবন। ভবনের ভিতর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে সুসজ্জিত একটি লাইব্রেরী, ক্যাফেটরিয়া, ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে করা হয়েছে আধুনিক ও উন্নত মানের যন্ত্রপাতি সম্বলিত ওয়ার্কশপ, ২য় ফ্লোরে রয়েছে সেমিনার কক্ষ এবং অন্যান্য ফ্লোরে পর্যায়ক্রমে রয়েছে ফিজিক্স ল্যাব, ক্যামিস্ট্রি ল্যাব, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ল্যাব, ২ টি কম্পিউটার ল্যাব, সার্ভে ল্যাব, থার্মোডাইনামিক্স ল্যাব, ফ্লুইড মেকানিক্স ল্যাব,সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব।বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সকল কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য পুরো অস্থায়ী ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ছাত্র মোঃ সোলায়মান বলেন, ইচ্ছা ছিলো দেশের বাইরে পড়াশোনা করার। কিন্তু সফল না হওয়ায় চার বছর মেয়াদী কোর্সে এখানে ভর্তি হয়েছি। গত ৪ মাস ধরে ক্লাস করছি। খুবই ভালো লাগছে। এখানকার নিয়ম-কানুন খুবই ভালো। ল্যাব ফ্যাসালিটিও খুব ভালো। আমাদের টিচাররা থিওরিক্যাল পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়ম-কানুনের উপর গুরুত্ব বেশী দেন।

একই ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী সাইমা সুলতানা বলেন, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিলাম। হিসাব করে দেখলাম ওখান থেকে পাস করে বেরোতে ৭ বছর সময় লেগে যাবে। আর এখান ৪ বছরে কোর্স সম্পন্ন করতে পারবো। কোর্স কমপ্লিট করে আমার ইচ্ছা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। সে সুযোগটাও পাবো। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এখানে ছাত্র রাজনীতি কিংবা কোন বিশৃঙ্খলা নেই। সেশন জটেরও কোন সুযোগ নেই। সবকিছু নিয়ম তান্ত্রিকভাবে চলে। এখানে ভর্তি হয়ে খুব ভালো লাগছে। হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। খুলনার অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখানে ল্যাব ফ্যাসালিটি সবচেয়ে ভালো।

প্রথম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী মানাম সাফিল খান বলেন, ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর আর্মিতে জব করার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তাদের পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেখানে নিয়ম শৃঙ্খলা, রুলস এন্ড রেগুলেশন অন্য যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা হবে, তাই এসব বিবেচনায় আর্মি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। ৪ মাস ক্লাস করে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে এখানে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তবমুখী শিক্ষার প্রতি শিক্ষকরা গুরত্ব বেশী দেন। ল্যাব ফ্যাসালিটি খুবই ভালো। শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক। কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। আমার জানামতে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ভিসি স্যার ক্লাস নেন না। কিন্তু আমরা ভর্তি হওয়ার পর দেখলাম ভিসি স্যার ক্লাসে এসে আমাদের আচার- ব্যবহার, নীতি নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, দেশের প্রতি মমত্ববোধ, পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য এ সকল বিষয়গুলো খুবই আন্তরিকতার সাথে উপস্থাপন করলেন।

BAUST Khuln ‘র রেজিস্টার অবসরপ্রাপ্ত লেঃ কর্নেল মোঃ আব্দুল গাফফার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি যেহেতু নতুন, তাই এর প্রাতিষ্ঠানিক কালচার সৃষ্টিতে আমরাই পারস্পরিক সম্মানবোধ ও আত্মসম্মানবোধকে গুরুত্ব দিয়ে একটি হৃদ্যতাপূর্ণ ইতিবাচক সাংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করছি। যা বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাইতে স্বতন্ত্র।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সেমিস্টারে রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীতে কর্মরত/ অবসরপ্রাপ্ত এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ব্রিগেঃ জেনাঃ মোঃ হুমায়ূন কবীর ভূঁইয়া খুলনা গেজেটকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এখানে যারা পড়াশোনা করবে তাদেরকে প্রযুক্তি নির্ভর হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা তাদেরকে এমন শিক্ষা দিবো যেটা তার ভিতরে দীর্ঘমেয়াদী একটা ছাপ থাকে। তারা যেন দেশকে কিছু দিতে পারে। ইতিমধ্যে আমরা এ অঞ্চলের অন্যতম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা আমাদেরকে সব ধরনের সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন।

ভিসি হুমায়ুন কবির বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি’র পার্থক্য হলো এখানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের আমরা পাঠ্যসূচির ক্লাস এবং প্রাকটিক্যালের বাইরেও তাদেরকে চরিত্র গঠন, নীতি-নৈতিকতার সাথে কাজ করা, শৃঙ্খলা শেখানো, ধর্মীয় মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রয়োজনীয়তা, নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ, শারীরিকভাবে সমর্থন হওয়া, দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, বড়দের সম্মান করা, পিতা-মাতার প্রতি অনুগত থাকা, পোশাক পরিচ্ছেদের প্রতি অতিশয় যত্নবান থাকা, সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

তিনি আরো বলেন, কুয়েট থেকে ২ কিঃমিঃ দক্ষিনে খুলনা-মংলা হাইওয়ে বাইপাস সড়কের ওয়েভ ফ্যাক্টরির পার্শ্ববর্তী ১৩ একর জায়গার উপর আমাদের নিজস্ব একাডেমিক ভবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করি ২০২৬ সালের মধ্যে নতুন ক্যাম্পাসে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো ইনশাল্লাহ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!