খুলনায় পুলিশের উপস্থিতিতে সস্ত্রাসী হামলায় ৩ জন আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পাইকগাছা উপজেলার নাসিরপুরে এ ঘটনাটি ঘটে। আহতরা হলেন হোসেন মল্লিক, শফিয়ার মোড়ল ও বাক্কার মোড়ল। আহতদের মধ্যে হোসেন মল্লিকের অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাতে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
হোসেন মল্লিক উপজেলার কপিলমুনি নাসিরপুর এলাকার মৃত আফসার মল্লিকের ছেলে। তবে পুলিশ সামনে হামলার এ ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত)।
হোসেন মল্লিক খুলনা গেজেটকে বলেন, তিনি নাসিরপুর এলাকার ভাই ভাই কৃষিবিপনীর মালিক। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি উপজেলার ছাত্রদলের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনীতি বাদ দিয়ে ব্যবসায় মনযোগ দেন।
তিনি জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা নাজমুল ও কামরুল ছাত্রদের ওপর হামলা করেন। ওই হামলার ঘটনায় তাদের নামে থানায় মামলা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় ওই হামলার অন্যতম আসামি কামরুল ও নাজমুলকে গ্রেপ্তারে পুলিশ উপজেলার তালতলা এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানে যাওয়ার আগে কপিলমুনি ফাঁড়ির ৪জন পুলিশ সদস্য আসামিকে চিনিয়ে দিতে হোসেন মল্লিকসহ শফিয়ার মোড়ল ও বাক্কার মোড়লকে সঙ্গে নেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতা কামরুল ও নাজমুলের সঙ্গে লোকজন বেশি দেখে ২জন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। বাকী ২জন ঘটনাস্থলে থেকে যান। কিন্ত হোসেন মল্লিকের মোটরসাইকেল স্টাট না নেওয়ায় তিনিসহ আরও ২জন ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ছাত্রলীগ নেতা কামরুল ও নাজমুল তাদের দল পরিবর্তন করে। তারা বর্তমানে কপিলমুনি ২ নং ইউনিয়নের বিএনপি’র সাবেক চেয়ারম্যান সাহাদাৎ হোসেন ডাবলুর আর্শীবাদ পুষ্ট। চেয়ারম্যান ডাবলু ও তার ছোটভাই আজাদ ছাত্রলীগের ওই ২ জনকে দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঘের লুটপাট করিয়েছে।
তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় নাজমুল ও কামরুল বাহিনীর হাতে দেশী ও বিদেশী অস্ত্র ছিল। তারা রড়, লোহার পাইপ ও বিভলবর দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। আঘাতে তার বাম হাত ভেঙ্গে গেছে ও মাথার বামপাশে ৫ সেলাই লেগেছে। শফিয়ার মোড়ল ও বাক্কার মোড়লের অবস্থা তেমন খারাপ না হওয়ায় তারা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আহত হোসেন মল্লিকের ছেলে মিরাজ মল্লিক বলেন, তার বাবাকে এরআগেও ওই সন্ত্রসীরা একই কায়দায় আক্রমণ করেছিল। সে সময়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করতে পারে।
পাইকগাছা থানা যুবদলের সভাপতি তৈাহিদুজ্জামান মুকুল বলেন, নাজমুল ও কামরুল ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। কোন ঘটনার প্রতিবাদ করলেই নেমেই আসত নির্মম নির্যাতন। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে তারা আগের রুপ পরিবর্তন করে সাবেক চেয়ারম্যান সাদাত হোসেন ডাবলুর অনুসারি হয়েছেন। তাদের দিয়ে তিনি এলাকার বিভিন্ন ঘের দখল করছেন। শনিবার নাসিরপুর এলাকার সরকারি একটি খাল দখল করেছেন। সেখানে তিনি ৪ ভেড়া ও এলাকার লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ান।
সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন ডাবলু খুলনা গেজেটকে বলেন, নাসিরপুর এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। নাজমুল ও কামরুলকে তিনি তাদের চেনেন না বলে জানান। তাছাড়া তিনি কোন ঘের বা খাল দখলের সাথে কোন সময়ে জাড়িত নন ।
এদিকে পাইকগাছা থানার ওসি তদন্ত তুষার কান্তি দাস খুলনা গেজেটকে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ছাত্রদের করা মামলার আসামি নাজমুল ও কামরুলের অবস্থান জানতে পেরে পুলিশ তালতলা এলকায় অভিযান চালায়। ফিরে যাওয়ার পথে নাসিরপুর এলাকার একটি সরকারি খাল দখল নিয়ে দুপক্ষের হামলার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে যায়। তাদের মধ্যে মীমাংসার চেষ্টা করে। ওই সময়ে হোসেন মল্লিকসহ আর ২জন গুরুতর আহত হয়। পুলিশ তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়। আহতদের মধ্যে হোসেন মল্লিকের অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাতে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে থানায় এখনও পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
খুলনা গেজেট/এএজে