খুলনার কয়রায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মোহসিন রেজাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে ওই বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করে মোহসিন রেজার মৃতদেহ সেখানে ফেলে রাখা হয়। এতে পুড়ে যায় মৃতদেহটি।
সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কয়রা সদরের বাসভবন থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের আগুনে পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মহসিন রেজার চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সোমবার বিকেল ৪ টার দিকে আমরা খবর পাই মহসিন ভাইকে মেরে তার বাসায় আগুন দেয়া হয়েছে। তবে ওই সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন থাকায় আমরা সেখানে যেতে পারিনি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসভবন থেকে তার লাশ কয়রার গোবিন্দপুর গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে আনা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দাফন করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা যখন সন্ধ্যায় মহসিন ভাইয়ের কয়রা উপজেলা সদরের বাড়িতে পৌঁছাই, তখনও দেখি ভিতরে আগুন জ্বলছে। ঘরের বারান্দায়ও আগুনের তাপে গরম হয়ে আছে। সেখানেই পড়ে আছে চেয়ারম্যানের আগুনে পোড়া মরদেহ। কোনোরকমে পানি দিয়ে আগুনের তাপ কমিয়ে মরদেহ বের করে এনেছি। দোতলা বাসভবনের অনেকাংশ পুড়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়রার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে বিজয়োল্লাস শুরু করেন। বেলা তিনটার দিকে আনন্দমিছিল থেকে ভাঙচুর চালানো হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়। আগুন দেওয়া হয় খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামানের কয়রা সদরের বাসভবনে।
পরে কয়রা সদরে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মহসিন রেজার বাসায় আন্দোলনকারীরা হামলা করতে গেলে বাসার ভেতর থেকে অনবরত গুলি ছোড়া হয়। এতে ১০ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন।
কয়েকজন আন্দোলনকারী বলেন, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আন্দোলনকারীরা আরও সংগঠিত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মহসিন রেজার বাসায় হামলা চালিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তাঁরা তাঁকে সেখানে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় আগুনে পুড়ে যায় মহসিন রেজার মৃতদেহ।
সরেজমিনে সোমবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কয়রা সদরের বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়, বাসভবনের মধ্যে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। বারান্দায় পড়ে আছে একটি লাশ। উৎসুক মানুষ দাড়িয়ে দেখছেন চারিপাশ। তাঁরা বলছেন, পড়ে থাকা মৃত দেহটি মহসিন রেজার। তবে চেহারা ঝলসে যাওয়ায় স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে না। এসময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।
কয়রা থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাইরের কোন খবর নেই আমাদের কাছে। উপজেলা চেয়ারম্যান মারা গেছে কিনা জানিনা। আমরা থানার ভেতরে আছি। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এর বাইরে যাওয়া যাবে না।
খুলনা গেজেট/এনএম