খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কয়েকজন বিচারপতির আচরণের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে, এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে : সুপ্রিম কোর্ট
  সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক বিকালে
  ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
খুলনায় এক বছরে সাড়ে ৬ কোটি টাকার স্বর্ণ জব্দ, গ্রেপ্তার ১২

ধরাছোয়ার বাইরে থাকছে সোনা পাচারের গডফাদাররা

বশির হোসেন

ঢাকা ও চট্রগ্রাম থেকে ভারতে স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে খুলনা। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে অবৈধ স্বর্ণ। যা খুলনা হয়ে চলে যায় সাতক্ষীরা। সেখান থেকে পাচার হয় ভারতে। গত ৩৩ দিনে তিন দফা স্বর্ণের চালান আটক করেছে খুলনার লবনচরা থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার আটকে থাকে শুধু বাহকের মধ্যেই। আর গড ফাদাররা থাকেন সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

৯টি অভিযানে ৬ কোটি টাকার সোনা জব্দ: লবনচরা থানা সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার খুলনা নগরীর সাচিবুনিয়া মোড়ে বাবুল ও নয়ন নামে দুই চোরা কারবারিকে গ্রেপ্তার করে লবনচরা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ তৌহিদুজ্জামান। এদের একজনের বাড়ি খাগড়াছড়ি ও অন্যজনের রাঙ্গামাটি। সোনার বিস্কুটের পরিবর্তে এবার অভিনব কায়দায় সোনা পাচার করছিল তারা। বেল্ট এ সোনার বকলেস তৈরি করে তাতে সিলভার প্রলেপ দিয়ে কোমড়ে পড়াছিলেন তারা। এর ২ সপ্তাহ আগে একই স্থান থেকে পায়ুপথে সোনা পাচারের সময় ৮পিস বারসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ৩০ অক্টোবর একই স্থান থেকে ৪পিস সোনার বার উদ্ধার করে লবনচরা থানা।

খোজ নিয়ে জানা যায়, ভারতে সোনা পাচারের সময় খুলনার সাচিবুনিয়া ও জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ৯ বার সোনাসহ ১২ পাচারকারিকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ১৫ পিস ও ৭ সেপ্টেম্বর ৪ পিস উদ্ধার হয়। এ ছাড়া ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি ৩ পিস, ১৫ জানুয়ারি ৩ পিস, ২০ এপ্রিল ১২ পিস, ২ মে ৭ পিস, ৩০ অক্টোবর ৪ পিস ও ১৩ নভেম্বর ৮ পিস ও ২ ডিসেম্বর ২পিস বেল্ট এর বকলেস এবং একটি বালা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৫৬টি স্বর্ণের বার ২টি স্বর্ণের বেল্ট বকলেস এবং একটি বালা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৭ কেজি ওজনের স্বর্ণের দাম ৬ কোটি ১২ লাখ টাকার বেশি।

কিভাবে পাচার হয় গডফাদার কারা: রাজধানীর সুত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ আবুল কালাম। প্রতিমাসে অন্তত ৬ বার ঢাকা থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক হয়ে স্বর্ণের বার নিয়ে যায় সাতক্ষীরা। পুলিশের হাতে ধরা পরার আগে ১২ বার স্বর্ণ পাচার করেছেন বলে জানান তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরায় তিনজন মাফিয়া স্বর্ণ চোরাচালানের এই সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। দেবহাটা উপজেলার সাবেক এক চেয়ারম্যানের সাথে এই জগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন আরও দু’জন।

প্রথমে ঢাকা থেকেই যাত্রীবাহী বাসে করে খুলনা হয়ে সাতক্ষীরা যান স্বর্ণ পাচারকারীরা। সোনা নিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সংগ্রাম হাসপাতালের বিপরীতের গলি থেকে কিছু দুর দিয়ে মাষ্টার বাড়ি নামে খ্যাত একটি বাড়িতে ২ রুম নিয়ে ভাড়া থাকতেন শাকিল নামে এক যুবক। সিমেন্ট এর দোকানের কর্মচারী শাকিলকে কাজের বিশ্বস্ততায় স্বর্ণ আনলোড করার দায়িত্ব দেন তার মালিক। ১২ হাজার টাকায় ভাড়া নেয়া ওই বাড়িতে বসেই স্বর্ণ বাহকদের কাছ থেকে স্বর্ণ বুঝে নিয়ে জমা রাখতো শাকিল। সাতক্ষীরায় অভিযান চালায় লবনচরা থানা পুলিশ। উপ-পরিদর্শক প্রদীপ বৈদ্যের নেতৃত্বে চলা ওই অভিযানে গ্রেপ্তার হন শাকিল। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে শাকিলকে আদালতে প্রেরণ করা রয়েছে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন অপর দুই স্বর্ণ চোরাচালান মাফিয়া।

এসআই প্রদীপ বৈদ্য বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে কাজ করছি। গত ৩৩ দিনের মধ্যে আমরা তিনজনকে আটক করেছি। তাদের দেয়া তথ্য মত, সাতক্ষীরা থেকে শাকিল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুলনাকে স্বর্ণ চোরাচালানের রুট হিসাবে ব্যবহার হতে দেয়া হবে না।

এ প্রসঙ্গে লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, মূলত ঢাকা থেকেই সোনার চালান বেশি আসে। পাচারে বহুবার হাতবদল হয়। ফলে মূলহোতা শনাক্ত মুশকিল হয়ে পড়ে। তবে চোরাচালান আটকের পর মামলা হয়। মামলার পর চোরাকারবারে যাদের সংশ্লিষ্টতা ও নাম ঠিকানা পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়।

খুলনার নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক এড বাবুল হাওলাদার বলে, বর্তমানে স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে খুলনা। সরকারের এখনই উচিত এই বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে তল্লাসী বাড়ানো এবং বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নিরাত্তা নিশ্চিত করা বর্তমানে মাঠে যৌথ বহিনী রয়েছে তারাও এ বিষয়ে ভুমিকা পালন করতে পারেন।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!