খুলনা নগরীর কমল কান্তি অধিকারী মুক্তিযুদ্ধের সনদপত্র সারেন্ডার করেছেন। তিনি রূপসা স্ট্যান্ড রোডের ১০ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা। মৃত তারক চন্দ্র অধিকারীর ছেলে। জেলার কয়রা উপজেলার ১৫ জন অমুক্তিযোদ্ধাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এবারের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে খুলনার কোন অমুক্তিযোদ্ধাকে জেলা প্রশাসন আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন না। খুলনায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সামাজিকভাবে অমুক্তিযোদ্ধাদের বয়কট করার জন্য স্বাধীনতা প্রত্যাশীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারি যানবাহনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধা না দেয়ার ওপরেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের খুলনা জেলা ইউনিটের সূত্র জানান, কমল কান্তি নতুন বাজার এলাকার পশুখাদ্য ও চাল ব্যবসায়ী। যৌবনে টিভি মেকানিক ছিলেন। জয় বাংলা বাহিনীর প্রধান কাস্টমঘাট এলাকার অধিবাসী শেখ আব্দুল কাইয়ুমের সহযোগিতায় এ সনদ গ্রহণ করেন। সনদে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন ও সচিবের সাক্ষর রয়েছে। সনদে মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নম্বর ০১৪৭০০০১২০৩ ও মুক্তিবার্তা নম্বর ০৪০১০১২০২৪। সনদ সারেন্ডারের বিষয়টি কমল কান্তি গতকাল এ প্রতিনিধির কাছে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে খুলনা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
এক সপ্তাহ আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা আহবায়ক মো. আবু জাফরের কাছে এ সনদ তুলে দেন। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে সারেন্ডারের কথা রয়েছে।
জেলা আহবায়ক মো. আবু জাফর বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে কমল সনদ সারেন্ডার
করেছেন। সারেন্ডারের পাইপ লাইনে আছেন দক্ষিণ টুটপাড়া গাছতলা মন্দিরের পার্শ্ববর্তী এলাকার অধিবাসী সুবল রমেশ নিখিল।
নগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট আ ব ম নুরুল আলম বলেছেন, অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণে নয়া সংসদ কোমর বেঁধে নেমেছে। এই তালিকায় আছেন মিয়া পাড়া অধিবাসী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ। অন্যান্যরা বলেছেন, ৬৯’র অগ্নিকন্যা অধ্যাপিকা হাসিনা বানু শিরীন অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তিনি খুলনা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। তৃতীয় জাতীয় সংসদে হুইপ ছিলেন। রায়ের মহলের অধিবাসী শেখ জাহিদুর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনি ইতোমধ্যেই ইন্তেকাল করেছেন।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সূত্র বলেছেন, অমুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার প্রদান অনুষ্ঠান স্থগিত করতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন তা অনুসরণ করছে। সন্দেহের তালিকায় আছেন খান জাহান আলী রোডের অধিবাসী শাহীন আজাদ চৌধুরী ও তেরখাদার আবদুল মোতালেব শেখ। গত ২২ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ও নগর ইউনিট পুন:র্গঠিত হবার পর অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণে কোমর বেঁধে নেমেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর কয়রা উপজেলার বাগালী গ্রামের এস এম গফফার, মহারাজপুর গ্রামের আবদুল গফুর গাজী, প্রভাষক লুৎফর রহমান গাজী, ১ নং কয়রা গ্রামের আবদুল রশিদ গাজী, উত্তর বেদকাশীর আশরাফ হোসেন মাস্টার, নাকশা গ্রামের আকসেদ আলী, দক্ষিণ বেদকাশীর আবদুল গফুর সরদার, মাধবকুমার মন্ডল, হাতিয়ারডাঙা গ্রামের নির্মল চন্দ্র মন্ডল, মদিনাবাদ গ্রামের ইমতিয়াজ উদ্দিন সরদার, অর্জুনপুর গ্রামের আবুল হোসেন গাজী, কালনা গ্রামের আফতাব উদ্দিন হাওলাদার, শিমলারাইট গ্রামের লুৎফর রহমান মোল্লা, বামিয়া গ্রামের সফেদ আলী গাজী, মসজিদকুর গ্রামের আব্দুর রহমান সানা ও আমাদি গ্রামের অসীত বরণ রায়কে অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংসদ সদস্য শেখ মো. নুরুল হক ও আক্তারুজ্জামান বাবুর সুপারিশে তারা এ সনদ গ্রহণের এবং ভাতা ভোগের সুযোগ পায়। তাদের স্বজনরাও সরকারি দপ্তরে চাকরি নিয়েছেন। খাস জমি বরাদ্দ পেয়েছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছেন।
এ উপজেলার ১৬৮ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ৩০ জনকে অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক জি এম মাওলা বকস বলেন, অমুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মুক্তিযোদ্ধার সনদ, ভাতা ও তাদের স্বজনদের সরকারি চাকরিতে সুযোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কলঙ্কিত করা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে এ উপজেলায় অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ চূড়ান্ত হয়েছে। সংসদের এসব জঞ্জাল ও দীর্ঘদিনের জমে থাকা কলঙ্কমুক্ত করতে সংসদের নগর আহবায়ক, সাবেক মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা আহবায়ক মো. আবু জাফর সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এমএম