বল হাতে ২ উইকেট এবং ব্যাট হাতে অপরাজিত ৩৬ রান। ঘরের মাঠে নাসির হোসেনের প্রত্যাবর্তনটা দেখার মতোই ছিল। ব্যাট ও বল হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তারুণ্যনির্ভর ঢাকা ডমিনেটর্সকে প্রথম ম্যাচেই জয় দিয়েছেন অধিনায়ক। এবারের বিপিএলের তৃতীয় ম্যাচে খুলনা টাইগার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে নাসির হোসেনের দল।
শনিবার মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে খুলনাকে ব্যাটিং ও বোলিং কোনো ডিপার্টমেন্টেই সুযোগ দেয়নি নাসির হোসেনদের তরুণ ঢাকা দল। টস জিতে শুরুতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ঢাকার অধিনায়ক নাসির। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে খুলনাকে ১১৩ রানেই আটকে দেন ঢাকার বোলাররা। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ৫ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ঢাকা।
খুলনা ২০ ওভার খেলে জড়ো করতে পারে ১১৩ রান। ওই রান টপকাতে শেষ পর্যন্ত খেলতে হয় ঢাকাকে।দলের জয়ে ব্যাটে-বলে অবদান ঢাকার অধিনায়ক নাসির হোসেনের। ৪ ওভার বল করে ২৯ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৩৬ বলে অপরাজিত ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
১১৪ রানের লক্ষ্যে নেমে দিলশান মুনাবীরার ব্যাটে জুতসই শুরু পেয়েছিল ঢাকা। আরেক ওপেনার আহমেদ শেহজাদ ভ্যান মিক্রিনের বলে হাতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়লে তার সঙ্গে যোগ দেন সৌম্য সরকার।
নাসুমের বলে ৫ রানে থামতে পারতেন সৌম্য। স্লগ সুইপের চেষ্টায় গিয়ে হন পরাস্ত, মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আউট দিলে রিভিউ নেন তিনি। অনেকবার রিপ্লে দেখেও বিকল্প ডিআরএসে পরিস্কার হওয়া যায়নি কিছু। তবু সিদ্ধান্ত ওভারটার্ন হয়।
বেঁচে যাওয়া সৌম্য নাসুমকে পরের বলেই মারেন চার, ওয়াহাব রিয়াজকে উড়ান ছক্কায়। ওয়াহাবের বলেই থামতে হয় তাকে। থিতু থাকা বাঁহাতি কট বিহাইন্ড হন উইকেটের পেছনে।
পরিস্থিতি বুঝে টিকে যাওয়া মুনবিরার দৌড় থামান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তার সোজা বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউতে বিদায় নেন লঙ্কান ব্যাটার।
অধিনায়ক নাসির সময় নিয়ে থিতু হয়ে সামলান পরিস্থিতি, একবার জীবন পেয়ে উসমান গনিকে নিয়ে বের করে নেন ম্যাচ। পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ৩৩ বলে ৩৪। ৬ষ্ঠ উইকেটে ১০ বলে আরিফুল হকের সঙ্গে আরও ১৭ রান তুলে শেষ করে দেন খেলা।
টস হেরে খেলতে নেমে শুরুতেই ধুঁকতে থাকে ঢাকা। মন্থর উইকেটে বল থেমে আসছিল। রান বের করতে অস্থির হয়ে উঠছিলেন তামিম ইকবাল-শারজিল খান।
নাসিরকে এক বাউন্ডারি মারার পর ভেতরে ঢোকা বলে স্লগ সুইপের চেষ্টায় বোল্ড হয়ে ফেরেন শারজিল। তিনে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি পাওয়া মুনিম শাহরিয়ার আউট হন আল-আমিন হোসেনের বলে। জায়গায় দাঁড়িয়ে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে কিপারের হাতে দেন ক্যাচ।
দলের সবচেয়ে বড় তারকা তামিম ফেরেন দৃষ্টিকটু শটে। আরাফাত সানির বাঁহাতি স্পিন তার জন্য ছিল আদর্শ ম্যাচ। অনেক শর্ট বল লেগ স্টাম্পের দিকে আসছিল, বাউন্ডারি অনায়াসে মারার মতো ছিল বল। ব্যাট ঘুরিয়ে তামিম অদ্ভুতুড়ে শটে ধরা দেন শর্ট স্কয়ার লেগে।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন ইয়াসির আলি ও আজম খান। থিতু হতে সময় নেওয়া ইয়াসিরকে পাশে রেখে দ্রুত রান আনছিলেন পাকিস্তানি আজম। ভুল সময়ে বিদায় তার। ১২ বলে ৩ চারে ১৮ রান করা আজম বোল্ড হন সানির সোজা বলে।
পঞ্চম উইকেটেও সাইফুদ্দিনের সঙ্গে জুটি পেয়েছিলেন ইয়াসির। ৩৪ বলে ৩১ রানের জুটির পর খুলনা অধিনায়ক ফেরেন থিতু হয়ে।
আড়ষ্ট হয়ে থাকা ইয়াসির নাসিরকে ছক্কায় উড়িয়ে জড়তা ভাঙলেও পরের বলেই তুলে দেন সহজ ক্যাচ। ২৫ বলে থামেন ২৪ করে।
ছয়ে সুযোগ পেয়ে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও ছিলেন আড়ষ্ট। প্রথম ১৮ বলে করেন স্রেফ ৫ রান। পরের ১০ বলে যোগ করেন আরও ১০ রান। মেরে খেলার অ্যাপ্রোচ নিতে গিয়ে থামতে হয় তাকে। আল-আমিনের বলে তুলে দেন সহজ ক্যাচ।
পরের দিকে সাব্বির রহমানের ১১ বলে ১১ আর ওয়াহাব রিয়াজের ৩ বলে ১০ রানের ছোট্ট অবদান খুলনাকে তিন অঙ্ক ছাড়িয়ে নিতে সাহায্য করে। তবে শেষ পর্যন্ত অন্তত আরও ১৫ রানের ঘাটতি টের পাওয়া যায় প্রবলভাবে।
খুলনা গেজেট/এমএম