অক্লান্ত পরিশ্রম, চেষ্টা আর একাগ্রতার বিনিময়েই আসে সফলতা। লেগে থাকার মানুষিকতা মানুষকে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। কথাটি আবারও প্রমাণিত হল মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) অনুষ্ঠিত খু্বির আন্তঃডিসিপ্লিন ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচের মধ্যে দিয়ে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের কাছে ১৭ রানে হেরে যায় পরিসংখ্যান। এটা যেন অবশ্যম্ভামী ছিল। টানটান উত্তেজনা পূর্ণ ম্যাচে দর্শককের আগ্রহের কোন কমতি ছিল না। প্রতিটি মূহুর্ত ছিল সাসপেন্সে ভরা। এই বুঝি ম্যাচ হাতছাড়া হল।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছরই ঘটা করে আন্তঃডিসিপ্লিন ভলিবল, ক্রিকেটের আয়োজন করে আসছে। যদিও করোনার কারণে দুই বছর এই কার্যক্রমে ভাটা পড়েছিল। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শারিরীক শিক্ষা চর্চা বিভাগের উদ্যোগে আবার খেলার উৎসবে মেতে উঠে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
এই তো সেদিনের কথা। ২০১৬ সালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের পথ চলা শুরু হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ডিসিপ্লিনের বয়স খুব একটা বেশি না। মাত্র ৬ বছরে পা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত স্নাতক শেষ করেছে একটা ব্যাচ।
এতো নবীন একটা ডিসিপ্লিনের এতো বড় একটা সাফল্য অভাবনীয়। মাত্র ৬ বছরের যাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অভিজ্ঞ টিমের বিপরীতে টানা অপরাজিত থেকে শেষে গতবারের রানার্সআপ পরিসংখ্যানের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে আনার আনন্দ যেনো বাধভাঙ্গা।
শুধু ক্রিকেটে নয়, ভলিবলেও সাংবাদিকতা টিম যথেষ্ট ভালো খেলে। সবচেয়ে মজার বিষয় ভলিবলে মেয়েরা এবার সহ পরপর দু’বার রানার্সআপ। সুতরাং হারার বেদনা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম কিছুদিন আগেই। সে হিসেবে ছেলেদের ক্রিকেটে এমন দাপুটে জয় আমাদের প্রাপ্যই ছিল।
শুরুর দিকে আমাদের খেলা একটু ধীর গতিতে ছিল। আশানুরূপ রান তোলা যাচ্ছিল না। শেষে ১৩২ রানে এসে ইনিংস শেষ হয়। জয়ের জন্য পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের তখন দরকার ১৩৩ রান।
অভিজ্ঞ পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের কাছে হয়তো এই রান তোলা কোন ব্যাপারই ছিল না। তাদের বিগত ম্যাচগুলো সে ইঙ্গিত দেয়। তবে আমাদের প্লেয়ারদের মনে ছিল জয়ের অদম্য ইচ্ছা, প্রবল সাহস। তাই আমাদের বোলাররা সর্বশক্তি দিয়ে ঝানু পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ব্যাটসম্যানদের কাবু করে ফেলে। একের পর এক উইকেট হারিয়ে দেখা যায় পরিসংখ্যানের ঝুলিতে ১১৫ রান। জয়ের জন্য আরো দরকার ১৭ রান। জয়টা এভাবেই অধরাই থেকে যায় পরিসংখ্যানের জন্য। আর সেই সাথে বহুল কাঙ্খিত জয়টা আসে এমসিজে’র ঘরে।
জয়ের আনন্দ ব্যক্ত করতে গিয়ে টিম এমসিজের ক্যাপ্টেন সাদমান সাকিব বলেন, এই জয় অনেক দিনের স্বপ্নের জয়। প্রথম জয়,অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা। আগেও আমাদের মেয়েরা দু’বার ফাইনালে খেলে হেরে গেছে। সেদিক দিয়ে এই জয়টা আমাদের জন্য দরকার ছিল।
তিনি আরও বলেন, এটা আমাদের টিম মেম্বারদের পরিশ্রম, এককথায় কমপ্লিট টিমওয়ার্কের ফলেই এই জয় সম্ভব হয়েছে। আমরা আশা করি এই জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিককতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক শাফায়াত হোসেন ধন্যবাদ ও অভিনন্দন দিয়ে বলেন, যেকোন জয়ের পেছনে থাকে পরম সাধনা, ঐকান্তিক দলীয় প্রচেষ্টা। যেটা শুরু থেকেই আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিল। সুশৃঙ্খল পরিবেশ, সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীর দিক নির্দেশনা ও উৎসাহ দিয়েছেন পুরো খেলা জুড়েই। তিনি বলেন, এটাই কেবল প্রথম জয় নয়, এটা বিজয়ের শুরু। তিনি এমসিজে’র ক্রিকেট টিমের সাফল্যের ধারাবাহিকতা কামনা করেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আবুসাইদ খান বলেন, যেকোন বিজয় ভিন্ন আনন্দ অনুভূতির জন্ম দেয়। তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি শারীরিক কসরত সহ খেলাধুলার প্রয়োজনীতার কথা বলেন। তিনি বলেন, খেলাধুলা সৌহার্দ্য ও মনে আনন্দ অনুভূতি তৈরি করে। তিনি বিজয়ী ও রানার্সআপ উভয়দলকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন করোনার কারণে খেলাধুলা বন্ধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উদ্যোগে এটা আবার চালু হয়েছে। এই উৎসাহ উদ্দীপনা চালু থাকুক। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বিষয়ে সব সময় ডিসিপ্লিন থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।