খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা ৬ মামলা বাতিল করেছে হাইকোর্ট
  জুলাই-আগস্টে হত্যা : সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি মেহেদীর জামিন স্থগিত
  সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

খুবি’র দুই শিক্ষার্থী যেভাবে সফল উদ্যোক্তা

মেহেদী হাসান বাপ্পী

করোনাকালে পুরো বিশ্ব যখন থমকে আছে সেই মুহুর্তে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমেও যে কিছু করা যেতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। নিজেদের পড়ালেখার পাশাপাশি নতুন এবং ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছে শক্তি এই দুই শিক্ষার্থীকে বানিয়েছে তরুণ উদ্যোক্তা। করোনা মহামারীতে নিজেদের খরচ চালিয়ে পরিবারের জন্য রাখছেন অবদান। আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে খুবি’র নাজমুল ইসলাম ও সামিয়া আক্তার মিতার সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পিছনের গল্প।

নাজমুলের ‘এ্যালিগেন্স অনলাইন শপ’

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভেবেছিলেন আমাকে স্বাবলম্বী হতে হবে, নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ, শুরু করলাম টিউশনি এবং কোচিং এ পড়ানো। কিন্তু একটা সময়ে এগুলো সব বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। তখনো মাথায় ঘুরছে কিছু একটা তো আমাকে করতে হবে। এরপর ২০১৯ সালের শুরুর দিকে টিউশনির জমানো কিছু টাকা দিয়ে অনলাইন ব্যবসায় শুরু করার উদ্যোগ নিলাম। তারপর থেকে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই চলছে। এই করোনা পরিস্থিতিতেও প্রায় দশ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করেছি।’ এমনটাই বলছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম।

ফেসবুক পেজ ‘এ্যালিগেন্স অনলাইন শপ’ এর মাধ্যমে দেশীয় তাঁত পণ্য ( টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ী এবং ছেলেদের গার্মেন্টস পোশাক) বিক্রি করে থাকেন নাজমুল। টাঙ্গাইলের তাঁত বুননের কাজে সরাসরি যারা জড়িত তাদের থেকে পণ্য নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করেন। এছাড়াও দারাজ শপে তিনি একজন ভেরিফায়েড সেলার হিসাবে কাজ করছেন এবং এখান থেকে বেশ ভালোই লভ্যাংশ পান। যা দিয়ে নাজমুল নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্বও পালন করছেন। সুলভ মূল্যে সারা দেশে দেশীয় তাঁত পণ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে দেশীয় তাঁত শিল্প বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।

এতো রকম ব্যবসায় থাকতে অনলাইন ব্যবসার উদ্যোগ কেনো নিলেন, জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, “ আমি একবার অনলাইনে কিছু দরকারি জিনিস অর্ডার করেছিলাম। কিন্তু তাদের পেজে ঠিক যেমনটা দেখানো হয়েছিলো সেরকম কাঙ্খিত পণ্য না পেয়ে প্রতারিত হই। তখনই ভেবেছিলাম যদি কিছু করি তাহলে সেটা হতে হবে ১০০% বিশ্বস্ত এবং ঠিক যে ধরণের বা মানের পণ্য দেখাবো ঠিক সেটাই সরবরাহ করবো যাতে কেও প্রতারিত না হয়।

বর্তমানে দেশের ৬৪ টি জেলাতেই পণ্য সরবরাহ করছি এবং আলহামদুলিল্লাহ ক্রেতাদের থেকে বেশ ভালো সাড়া পাই। তাছাড়া আমার বেশ কিছু রিপিটেড কাস্টমার আছেন যারা একবার আমার থেকে পণ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন এখন নিজের জন্য নেওয়ার পাশাপাশি পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের জন্য ও নিয়মিত পণ্য সংগ্রহ করেন।”

ব্যবসায় নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, “ ভবিষ্যতে যদি চাকরিও করি তার পাশাপাশি এই অনলাইন ব্যবসায়টা চালু রাখবো। এছাড়া সব সময়ের জন্য ক্রেতাদের সন্তুষ্ট রাখতে উন্নতমান বজায় রেখে এটিকে আরও সম্প্রসারিত করবো প্রয়োজনে ই-কমার্স সাইট বা ওয়েব সাইট ও চালু করার ইচ্ছে আছে।”

 

সামিয়া মিতার ‘খুলনা আঁচার ঘর’

‘অনলাইনে অনেক আগে থেকেই প্রয়োজনীয় টুকটাক জিনিসপত্র কিনতাম। কিন্তু খাবারের তেমন ভালো শপ তখন ছিলো না। আর থাকলেও তাদের রিভিউ তেমন ভালো পাইনি। নিজে থেকে কিছু করার ইচ্ছে সবসময়ই ছিলো কিন্তু চাইতাম একটু অন্যরকম বা ইউনিক কিছু করা যায় কিনা। এদিকে বন্ধুমহলে আমার মায়ের বানানো আঁচারের প্রশংসা অনেকবার শুনেছি। ভাবলাম তাহলে এই আঁচার দিয়েই শুরু করছি না কেনো! শুরুর দিকে অর্ডার কম পেলেও এখন রেসপন্স বেশ ভালো। এখন অনেকেই পাইকারি দরে আঁচার নিয়ে নিজের দোকানে বিক্রি করছেন।’খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার মিতা বলছিলেন তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার শুরুর কথা।

২০১৮ সালে চার-পাঁচ রকমের আঁচার দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন ১৮-২০ রকমের আচার পাওয়া যায় খুলনা আচার ঘরে। এর মধ্যে রয়েছে আমের টক-ঝাল-মিষ্টি আঁচার, তেতুল, আমড়া, জলপাই, বরই, কাঁচা ঝাল, লেবু, রসুন, বোম্বাই ঝাল, জাম, চালতা, আমলকিসহ বিভিন্ন পদের টক-ঝাল-মিষ্টি আচার। সিজন ভেদে আচারের স্বাদে ও রকমে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন তিনি।

বর্তমানে সামিয়ার সাথে তার বাবা-মা দুজনই এই কাজে সহায়তা করেন। করোনার কারণে ডেলিভারীর কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্থ হলেও কাস্টমাররা যখন ফোন করে পজেটিভ রিভিউ দেয় তখন নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে কোনো কিছুকেই আর প্রতিবন্ধকতা মনে করতে চান না এই নবীণ উদ্যোক্তা।

সামিয়া জানান, “আমি খুবই স্বল্প লাভে সেল করি। এই তিন বছরে মাত্র একবার আঁচারের দাম বাড়িয়েছি, তাও এই করোনার কারণে। অধিকাংশ ক্রেতারাই বাসায় খাওয়ার জন্য আঁচার কেনেন। এজন্য বেশ কিছু স্থায়ী কাস্টমার পেয়েছি যারা নিয়মিতই আঁচার নেনে। ‘খুলনা আঁচার ঘর’ ফেইসবুক পেজ এবং গ্রুপে কেউ অর্ডার কনফার্ম করলে প্রায়ই আমি নিজে পৌঁছে দিয়ে আসি এবং রিভিউ জানতে চাই। অনেক সময় ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী কাস্টমাইজড করে আচার তৈরি করে দেই।”

‘খুলনা আঁচার ঘর’ নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার ইচ্ছে এটাকে আরও সম্প্রসারিত করার এবং ব্রান্ডিং করে আঁচার শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও বিক্রি করার।”

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!