আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারের কোনো দায় থাকবে না। এর দায় বিএনপিকেই নিতে হবে, মির্জা ফখরুল সাহেবদের নিতে হবে। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সংবিধান ও আইন দ্বারা দেশ পরিচালিত হচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন ও সাংবিধানিক নিয়ন-নীতির মধ্যে যতটুকু সম্ভব তার সবটুকু সুযোগ বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার মানবিক হৃদয়ের কল্যাণে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খালেদা জিয়া বাসায় থাকছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়ার সর্বোচ্চ সুযোগ পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, হতে পারে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আইনের চোখে তিনি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার বর্তমান পরিচয় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপির নেতারা উল্টাপাল্টা প্রলাপ বকছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিএনপি জানে এবং সরকার জানে। এটা আমাদের দলের বিষয় নয়, আমরা জানিও না। তবে আমরা বলতে পারি, মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করতে পারেন। কারণ এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। কিন্তু মেরে ফেলা বা ষড়যন্ত্র আমাদের অভ্যাস নয়। আমাদের সরকারের (এরশাদের শাসনামলে) সময়ে এ ধরনের কাজ আমরা কখনোই করি নাই। এটা বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের বিষয়।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর নগরের দর্শনায় পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে একটি অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, সেখানে (বিদেশ) গিয়ে বেগম জিয়া রাজনীতি করতে পারেন। যেটি এখন করছেন তারেক রহমান। বেগম খালেদা জিয়া একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার সাজা মওকুফ করা হয়নি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে গতকাল যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে বেগম জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন তা তিনি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি যদি মনে করে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এখানে যথাযথ ভাবে হচ্ছে না, তাকে বিদেশে নেওয়া দরকার, তাহলে উচিত ছিল রাজনীতি না করে আইন অনুযায়ী সর্বশেষ পথ মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করলেই তার দণ্ড মওকুফ হয়ে যাবে। তখন তিনি স্বাধীনভাবে যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেন।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) আয়োজিত ‘বিশ্ব সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও হলি আর্টিজান-মুম্বাই হামলা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা চেয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও নজরুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ অংশ নেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সারা দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিএনপি নেতারা এ কর্মসূচি পালন করেছেন।
খুলনা গেজেট/এএ