সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের দেয়া মতামত বে-আইনি। এ আইনে এমন কোনো বিধান নেই যে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিদেশে যেতে পারবে না। এ আইন করাই হয়েছে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে কোনো অঘটন ঘটে গেলে তার দায়ভার সরকারের। রোববার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এমন প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
তিনি বলেন, আইনে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে। সেক্ষেত্রে সরকার একটা ঠুনকো আদেশ দিয়ে বলছেন, যে আইনের বিধান নাই। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিধান নাই এ কথাটা কোথায় আছে। ৪০১ এ বিধান আছে কি বিধান নাই। এটা তো বলা হয় নাই।
তিনি বলেন, সরকার একটা কন্ডিশন দিতে পারতো, যে হা, তোমার এই জটিল অসুখের জন্যে মেডিকেল টিম ওপেনিয়ন দিয়েছে তোমার বিদেশে চিকিৎসার দরকার। চিকিৎসার পরে তোমাকে দেশে ফেরত আসতে হবে। এ ছাড়া চিকিৎসার জন্যে বিদেশে যেতে দেয়া হবে না। আমি মনে করি বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত জনপ্রিয় নেত্রী, তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। সরকারের এই দায়ভারটা নেয়া উচিত হবে না। যদি একটা অঘটন ঘটে এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আর একটা জিনিস মনে রাখতে হবে। তার মামলা কিন্তু এখনো চূড়ান্ত ফয়সালা হয়নি। বিচারিক আদালত তাকে সাজা দিয়েছে, সেটার আপিল পেন্ডিং আছে। এমনও হতে পারে আপিলে খালাসও পেয়ে যেতে পারেন তিনি। সে ক্ষেত্রে আমি এখনো মনে করি সরকার এতো বড় দায়ভার নিবেন না। তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া উচিত।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ৪০১ ধারাটা ফৌজধারী কার্যবিধির এটা ব্যাপক আইন। এখানে নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যেকোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সাজা নির্বাহী আদেশে মওকুফ করা যাবে, কমানো যাবে। ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করা হয়েছিল তার সাজা স্থগিত করে চিকিৎসার জন্য। সেই চিকিৎসার সুযোগ তিনি পাননি। এখন তার অবস্থা অত্যন্ত জটিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে সরকার আইনের বিধান নাই, এই যে কথাটা বলছেন এটা সঠিক না। আইনের ব্যাখ্যাটা একটু মানবিক ভাবে করতে হবে এবং ওখানে কোন খানে লেখা নাই সাজা প্রাপ্ত আসামী বিদেশ চিকিৎসা দিতে পারবে না। এখানে ব্যাপক পাওয়ার এটা ওয়াইড করতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে দেশে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসুবিধা সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আবেদন বিএনপির ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ছিল বলে উল্লেখ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এখন বিদেশে নয়, দেশেই তাঁর সেবা-শুশ্রুষা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।’
রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসুবিধা পাচ্ছেন এবং এটি নিশ্চিত করতে সরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধার ফলে এরইমধ্যেই তাঁর করোনা নেগেটিভ এসেছে। এজন্য চিকিৎসকদেরও ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এরপরও খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য বিএনপির আবেদন-নিবেদনের হেতু বোধগম্য নয়। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে। কারণ, তিনি এখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠছেন।’
‘খালেদা জিয়াকে এখন বিদেশে নয়, দেশেই তাঁর সেবা-শুশ্রুষা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। সে কারণে খালেদা জিয়াকে তাদের (বিএনপির) বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আবেদনের উদ্দেশ্য চিকিৎসা নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলেই আমার মনে হয়,’ যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।