করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যেতে হলে আদালতের সম্মতি লাগবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিনউদ্দিন। মঙ্গলবার(৪ এপ্রিল) দুপুরে সুপ্রিমকোর্টে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমনটা জানান তিনি।
রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় সরকার। এখন এটা (বিদেশ নিতে) করতে গেলে আদালতে আসতে হবে, আমার মনে হচ্ছে আদালতে আসতে হবে। তারপরও আমি না দেখে বলতে পারছি না।
‘ওনার (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসা কতটুকু প্রয়োজন। এই খানে বাংলাদেশে কী আছে, না আছে, সবকিছু দেখে সরকার বিবেচনা করবে। সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে, যদি আইন আনুযায়ী প্রয়োজন হয়, তবে আদালতে আসবে সরকার। কারণ এটা তো সরকারি আদেশ, সরকারই এটা নির্ধারণ করবে।’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা সোমবার সকালের দিকে অবনতি হলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার বিষয়ে সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর।
খালেদা জিয়া এখনও সিসিইউতেই চিকিৎসাধীন আছেন বলে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। দলের চেয়ারপারসনের জন্য দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া চাইছি। সমস্ত দল নয়, সমগ্র জাতি আজকে প্রার্থনা করছেন, দোয়া করছেন। এই দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের শেষ আশ্রয়স্থল, যাকে গণতন্ত্রের একমাত্র প্রহরী বলা যায়, তিনি (খালেদা জিয়া) যেন অতি দ্রুত সুস্থতা লাভ করেন।’
দলীয়প্রধানের অসুস্থতায় নেতা-কর্মীদের সবাই উদ্বিগ্ন বলে জানালেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই সবাই উদ্বিগ্ন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে। এখনও উদ্বেগের মধ্যে আছেন দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা কী রকম এ নিয়ে? আপনারা সবাই শুনেছেন যে গতকাল তার একটু শ্বাসকষ্ট হওয়ায় সিসিইউতে নেয়া হয়েছে। এখনও তিনি সিসিইউতে আছেন। অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। এখন তিনি স্থিতিশীল আছেন।’
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুরুর দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থেকেই চিকিৎসা নেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বিএনপি থেকে একাধিক বার বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হলেও তেমন কোনো জটিলতা নেই খালেদা জিয়ার।
গত ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানো হয় খালেদা জিয়ার। সে রিপোর্ট ভালো আসে বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই রিপোর্টও পজিটিভ আসে। এরপর ২৭ এপ্রিল সিটি স্ক্যান করানোর জন্য আবার এভারকেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপি প্রধানকে। এদিনই তাকে হাসপাতালে ভর্তি কারানো হয়। তার চিকিৎসায় গঠন করা হয় একটি মেডিক্যাল বোর্ড। এতে হাসপাতালটির সাতজন চিকিৎসকের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত তিনজন চিকিৎসককেও রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খবরাখবর রাখছেন লন্ডনে থাকা তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানও।
মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার কিছু পরীক্ষা করে। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিস্ক্যান, ইসিজি, ইকো, হৃদরোগ। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে রাখা হতে পারে।
খুলনা গেজেট/ এস আই