বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণে বিরত থাকতে পরিচালক এম কে জামানকে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নোটিসটি পাঠান।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব কায়সার কামালের দাবি, খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের অনুমতি ছাড়াই এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে পরিচালক চেয়ারপারসনকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানাতে চেয়েছেন, তিনি অনুমতি নেননি। তাই দল থেকে করণীয় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন এম কে জামান নামের একজন নির্মাতা। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। গত মঙ্গলবার দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়, সিনেমা বানানোর জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
পোস্টে বলা হয়, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো সিনেমা বা ডকুমেন্টারি তৈরির কোনো প্রকার অনুমতি জিয়া পরিবারের কোনো সদস্য কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।’
ঘোষণার পরই পরিচালক সমিতিতে চলচ্চিত্রটির নামও নিবন্ধন করা হয়েছে। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করতে চেয়েছিল আকন্দ এন্টারটেইনমেন্ট পিএলসি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পরিচালক জামান এ দাবি করে জানিয়েছিলেন, ছবিটি নির্মাণের জন্য জিয়া পরিবারের অনুমতি তিনি নিয়েছেন। পান্ডুলিপির কাজ শেষে এখন চলছে প্রি-প্রোডাকশনের কাজ। সেপ্টেম্বরের শেষে শুটিং শুরু হবে।
এদিকে ২০১৩ সালে ‘আপসহীন’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন কিংবদন্তি গীতিকার প্রযোজক ও পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। খালেদা জিয়ার বায়োপিক এটি। পারিপাশির্^ক কারণে তখন এ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ছবিতে খালেদা জিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিপুন আক্তার, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চরিত্রে আছেন হেলাল খান।
২০১৩ সালের নভেম্বরে শুটিং শুরু করে ডিসেম্বরেই শেষ হয়। দ্রুত পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ সম্পন্ন করে সেন্সরে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন হেলাল খান। তার আগেই গ্রেপ্তার হন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) বর্তমান সভাপতি। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পরিকল্পনা ছিল, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছবিটি সারা দেশে মুক্তি দেওয়ার। তিনি জেলে থাকায় গাজী মাজহারুল আনোয়ার ‘আপসহীন’ মুক্তির কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। গাজী মাজহারুল আনোয়ার এখন বেঁচে নেই। ছবিটি নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতেই ছবিটি শিগগির মুক্তি দিতে চান।
এই ছবি মুক্তির আগে অবশ্যই খালেদা জিয়ার সঙ্গে একবার দেখা করবেন বলে জানান হেলাল খান। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম অসুস্থ। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে না। তিনি সুস্থ হলেই ছবিটি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করব। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই হবে।’
হেলাল খান আরও বলেন, ‘মাঝখানে ১১ বছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। তাই ছবিটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জন করতে হবে। কিছু দৃশ্য হয়তো নতুন করে শুটিং করব। কিছু দৃশ্য সম্পাদনা করে বাদ দেওয়া হবে। এ জন্যও কিছু দিন সময় লাগবে। আশা করছি, এ বছরই দর্শকদের ছবিটি দেখাতে পারব।’
ব্যক্তিজীবনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক নিপুন আক্তার ‘আপসহীন’ ছবিতে খালেদা জিয়ার চরিত্রে অভিনয় করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার আগে জয়া আহসান ও নুসরাত ইমরোজ তিশার কথা উঠেছিল। তবে গাজী আঙ্কেলই হেলাল ভাইকে বলেছিলেন, নিপুণ হলে ম্যাডামের চেহারার সঙ্গে দারুণ মিলবে।’
প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপল বলেন, ‘এটিই আমার বাবার নির্মিত শেষ চলচ্চিত্র। একপ্রকার গোপনেই তিনি শেষ করেছিলেন ছবিটির কাজ।’ বাবার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে সিনেমাটি শিগগিরই মুক্তি দিতে চান তিনি।
খুলনা গেজেট/এইচ