নগরীর খালিশপুরে চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র হাসিব হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম চার বছর পর আজ মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করা হতে পারে। ইতোমধ্যে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ৩নং আদালতে মামলার শুনানী শেষ হয়েছে।
আদালতের তথ্যে অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট রাত ৯ টার দিকে এলাকার মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক সংলগ্ন ক্রিয়েটিভ কার্টস এ্যন্ড কফি হাউজের মধ্যে একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে তৈয়্যেবা কলোনীর বাসিন্দা ও মিল শ্রমিক মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে কলেজ ছাত্র হাসিবুর রহমান নিয়াজকে। এ সময় তাকে বাঁচানোর জন্য দু’ বন্ধু যোবায়ের ও রানা এগিয়ে এলে তাদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়। হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। এ ব্যাপারে নিহতের পিতা হাবিবুর রহমান ঘটনার পরের দিন বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
চলতি বছরের ৭ মার্চ থেকে নগরীর খালিশপুরে আলোচিত কলেজ ছাত্র হাসিবুর রহমান নিয়াজ (২৫) হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে নির্ধারিত সময়ে বিচার শেষ না হওয়ায় আদালত মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলী করেন। জীবনের নিরাপত্তার অভাবে মামলার বাদী ও নিহতের পিতা হাবিবুর রহমান শিকদার একাধীকবার বিভিন্ন থানায় জিডি করেন। গত চার বছর ধরে তিনি বরিশাল থেকে খুলনায় মামলার তারিখের দিন এসে চলে যেতেন। এর আগে আসামি অন্তু আর আরাফাত স্বেচ্ছাসেবকলীগের মহানগর কমিটিতে স্থান পাওয়ার পর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাদের ভয়ে বাদী এলাকা ছাড়া হন।
২০২০ সালের ২০ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। গত ২৪ ডিসেম্বর ওই একই আদালতে চার্জশীটের ওপর শুনানি শেষে আদালত তা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামিরা হলেন কবির হোসেনের ছেলে সৈকত(৩২), রুনু হাওলাদারের ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি (২২), আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমীন রহমান শিখার ছেলে রওশন আনিজি অন্তু (৩৩), নুরু ওরফে কানা নুরুর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২২), শাহিন আলম সেন্টুর ছেলে ইমদাদুল ইসলাম হৃদয় (২২), আমির খানের ছেলে আরিফ ওরফে চোরা আরিফ (২৯), আমির খানের ছেলে মো. মুন্না (২৩), আমিন উদ্দীনের ছেলে রফিকুল হাসান শাওন ওরফে আতাং বাবু (২৭), ফখরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৬), সিদ্দিকের ছেলে মোস্তাক আহমেদ (২৭), মাইকেল সরদারের ছেলে মিঠাই হৃদয় (২৭), মো. শাকিলের ছেলে ফাইম ওরফে কালা ফাইম (২২), চুন্নুর ছেলে রুবেল (২৫), কবির হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮), বাহারুল ইসলামের ছেলে সবুজ (২৫), কুদ্দুসুর রহমানের ছেলে আরাফাত হোসেন (৩০), গোলাম মোস্তফার ছেলে তুষার (২৪), সিরাজুল ইসলাম নান্নুর ছেলে আশিকুর রহমান তুষার (২৬), জাকির হোসেনের ছেলে রাব্বী ওরফে নাটা রাব্বী (২৬), মনোয়ার হোসেনের ছেলে নাঈম বাবু ওরফে পয়েন্ট বাবু (২৬), আব্দুল জব্বারের ছেলে রায়হান (২৩), বেল্লাল হোসেনের ছেলে ইয়াসির রাব্বী ওরফে নাটা জুয়েল (২৬), কালামের ছেলে সালমান (২০), নাজমুল শেখের ছেলে সাকিব শেখ (২৩), আব্দুর রহমানের ছেলে নাইমুর রহমান ফাইম (২১), আব্দুল বারেক হাওলাদারের ছেলে রুনু হাওলাদার (৩৫) ও মুহিত মুনতাসির ইথুন (১৫)।
বাদীর আইনজীবী স্বপন কুমার দাস বলেন, মঙ্গলবার খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ রায় ঘোষণা করা হবে। এ আদালতের বিচার হচ্ছেন আঃ সালাম। এপিপি রয়েছেন রুমানা তানহা। এ মামলায় আসামি মোট ২৬ জন। এর মধ্যে ১৬ জন কারাগারে রয়েছে। বাকীরা পলাতক রয়েছে। এ মামলায় স্বাক্ষী হয়েছে ২৭ জনের। এ মামলাটি বাদীর জন্য ভাল মামলা। মামলায় তিন জন আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী করা আছে। লোকহর্ষক খুনের ভিডিও রয়েছে। স্বাক্ষী আর প্রমাণ যা আছে তাতে ৩/৪ জন আসামির ফাঁসির আদেশ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
খুলনা গেজেট/এএজে