দেশের খামারগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু সমস্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। পশুর মাধ্যমে এসব জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা অনেকাংশে কমছে। এমন পরিস্থিতিতে খামারে ৩৪টি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একইসঙ্গে জীবন রক্ষাকারী এই ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করছে সরকার। এমনকি প্রাণী বা মৎস্য পালন করতে ভেটেরিনারিয়ান, প্রাণী চিকিৎসক, মৎস্য চিকিৎসককের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টারে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম।
মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ওষুধের নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে দেশের আটটি বিভাগে আটটি মাইক্রোবিয়াল ল্যাব স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় এই ল্যাব স্থাপন করা হবে। নিম্নমান ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দোকানে রাখার অপরাধে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ২৭০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিন কোটি ২৪ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমান এবং বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সামান্য অসুস্থ হলে আমরা ওষুধের দোকান থেকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটি সেবন করি। এতে রোগ তো সারেই না, শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে আরও সর্তক হবে হবে। বিশেষ করে রোগী ও চিকিৎসকদের।
অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ওষুধ ও প্রসাধনীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওষুধ আইন পাস করা হয়েছে। নিরাপদ মাছ ও মৎস নিশ্চিতে প্রাণী বা মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর কাজ করছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কমাতে আইন করা হয়েছে। এখন এ আইন ব্যস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, কার্যক্ষমতা কমেছে এমন ৩৭টি অ্যান্টিবায়োটিক চিহৃত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬টি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। এদিকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিও হচ্ছে না। সুতরাং ভবিষৎ অনেক খারাপ এটি বলায় যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা, প্রেসক্রিপশন ছাড়া এর যথেচ্ছ ব্যবহার এর মূল কারণ। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কমাতে হলে এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
খুলনা গেজেট/এমএম