বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্তত ৬৩১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা এমআইএস শাখা থেকে প্রস্তুত খসড়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান এ কথা জানান। তিনি বলেন, সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তথ্য নিয়ে এ তালিকা করা হয়েছে। এর একটি অনুলিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হতাহতের তথ্য এই তালিকায় রয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি নিহত ও আহত হয়েছেন। এই বিভাগে ৪৭৭ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজার। সারাদেশে আহত হয়ে যারা হাসপাতালে গেছেন, তাদের ৩ হাজার ৪৮ জনের অবস্থা ছিল গুরুতর। তাদের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। কমপক্ষে ৫৩৫ জন স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৪৫০ জনকে হাসপাতালে আনা হয় মৃত অবস্থায়। বাকি ১৮১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
আন্দোলনে হতাহতের তালিকা করতে গত ১৫ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির এ কমিটির প্রধান। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা তালিকাটি তৈরি করে। মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, হতাহতের তালিকা তৈরি এবং তাদের পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেওয়ার জন্য নীতিমালা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের। তালিকার কাজ এখনও চলছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় মামলার ভয়সহ নানা কারণে নিহত অনেককে হাসপাতালে আনা হয়নি। এ কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
হতাহতের তথ্য চেয়ে ভিসি-ডিসি এসপিদের চিঠি
আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তথ্য এবং মামলার তথ্য চেয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সব জেলা প্রশাসক, এসপি, সিভিল সার্জন ও সরকারি হাসপাতালে চিঠি দিচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ ছাড়া সব গণমাধ্যমের কাছে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ফুটেজ চেয়ে অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি দেশের বড় কবরস্থানগুলোর তত্ত্বাবধায়কদের কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। কবরস্থানে পরিচয় আছে এবং বেওয়ারিশ হিসাবে কতজনকে দাফন করা হয়েছে– এ তথ্য চাওয়া হয়েছে। গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান চিফ প্রসিকিউটর।
তিনি বলেন, আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে তারা মতবিনিময় করবেন।
আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, তদন্তকালে আসামিদের গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন হবে।