সর্বশেষ কবে নাগাদ খালগুলি খনন করা হয়েছিলো এ সংক্রান্ত কোন তথ্য উপজেলা কৃষি দপ্তরে নেই। উপজেলাধীন ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য এ জাতীয় ৩০/৩২ খাল রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ সেগুলির খনন কাজ না হওয়ায় খালগুলির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হতে থাকে। বর্ষা মৌসুমে খালগুলি দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন হতে না পারার কারণে সৃষ্টি হতো জলবদ্ধতার। আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতো।
জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, দিঘলিয়ার সেনহাটী গ্রামের কৃতি সন্তান ওয়াহিদা আক্তার উপজেলা কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হন। এরপর তার একান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র মাধ্যমে অতি জরুরী লাখোয়াটী বিলের ৪ টি এবং হাজী গ্রামের ১টি মোট ৫টি খাল খননের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতিমধ্যে খালগুলি খননের কাজ সমাপ্তির পথে।
বিএডিসি’র খুলনা রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জামাল ফারুক বলেন, খালগুলি খননের ফলে ওই অঞ্চলের সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমির মালিক সুফল পাবে। উৎপাদন বাড়বে ১০ হাজার মণ অতিরিক্ত বোরো এবং আমন ধানের। উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সবজি চাষও। তিনি বলেন, হাজীগ্রাম মাথাভাঙ্গা খালটি খননের ফলে ওই এলাকার ৬০০ বিঘা জমির মালিক সুফল পাবে। ৫ হাজার মন ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সবজির। আর লাখোয়াটী বিলের ৪ টি খাল খননের ফলে ১২ হাজার মন বোরো ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত উৎপাদন হবে আমন ধান এবং সবজি।
দিঘলিয়া ও অন্যান্য উপজেলার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় খাল ৫ টি খনন হচ্ছে। খালগুলি হলো উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের লাখোয়াটী বিলের বেলে খাল, ধৌত খালি খাল, কুতুব উদ্দিনের জলা ও শরীফ বাড়ি খাল। এছাড়া সেনহাটি ইউনিয়নের হাজীগ্রাম মাথাভাঙ্গা খাল। খাল ৫ টি খননে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে ৫ টি খাল খননের ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী কাজ খুব দ্রুতই সম্পন্ন হবে।
দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, আমরা ১৮ টি খাল খননের প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। এর মধ্যে ৫ টি খাল খনন হচ্ছে। খাল ৫ টি খনন হলে ১৪৯ হেক্টর বা ১ হাজার ৪৩ বিঘা জমিতে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদিত হবে। আগে ১৯২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হতো। খালগুলির দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতো। খাল ৫ টি খননের ফলে শুষ্ক মৌসুমেও বোরো এবং আমন ধানের পাশাপাশি কৃষকেরা প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদন করতে পারবেন।
জানা যায়, দীর্ঘ ৩৫ থেকে ৪০ বছর যাবৎ খালগুলি সংস্কার না করার কারণে বিলের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হতো। বর্ষা মৌসুমী জলাবদ্ধতা লেগে থাকতো। ধান, সবজি এবং মাছ উৎপাদন ব্যাহত হতো। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে বোরো এবং আমন ধান এবং সবজি উৎপাদন ব্যাহত হতো।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, লাখোয়াটী বিলের ৪ টি খাল খননের ফলে ধৌত খালি সুইচ গেটের মাধ্যমে ভাটার সময় মজুদখালী নদীতে বিলের পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে। এছাড়া জোয়ারের সময় উক্ত সুইচগেটের মাধ্যমে খালে পানি উঠানো সম্ভব হবে। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে এবং শুষ্ক মৌসুমেও ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে।
এদিকে খালের মুখ বন্ধ রেখে হাজীগ্রাম মাথাভাঙ্গা খাল খননের সুফল ব্রক্ষগাতী, পানিগাতী, হাজীগ্রামের বিলের জমির মালিকেরা পেলেও খালের শেষাংশ আতাই নগর আশ্রয়ন প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী প্রায় ২’শ বিঘা আবাদি জমি বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। খালটির ৯৮০ মিটার খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ লক্ষ টাকা। আনিশা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি টিকাদারী প্রতিষ্ঠান খালটি খননের কাজ করছে।
খালটির খনন কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না। গভীর করা হচ্ছে না, খালের পাড়ের মাটি কেটে পাড়েই ফেলা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এ মাটি ধুয়ে আবার খালে পড়বে। এ সব অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ব্রক্ষগাতী বিল থেকে উৎপত্তি হওয়া মাথাভাঙ্গা খালটির পানি নিষ্কাশনে পার্শ্ববর্তী আতাই নদীর সঙ্গে কোন সংযোগ নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ বর্ষা মৌসুমে ব্রক্ষগাতী, পানিগাতী বিলের পানির প্রবাহের চাপে খালটির শেষাংশ আশ্রয়ন প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবিত হবে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, আতাই নগর আশ্রয়ন প্রকল্পের ফলে প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী এলাকার বিলের প্রায় ২’শ বিঘা জমির পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়। আশ্রয়ন প্রকল্পের ভিতর দিয়ে ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ৩৪০ টাকা ব্যয়ে হাজীগ্রাম আশ্রয়ন প্রকল্পে পাকা ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সরু ড্রেন দিয়ে যথাযথভাবে পানি নিষ্কাশিত হয় না।
এ ব্যাপারে কথা হয় খাল খনন প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) খুলনা রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জামাল ফারুকের সাথে।তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলি নির্মাণের ফলে প্রকল্প সংলগ্ন এলাকার দেড়’শ থেকে দুই’শ বিঘা জমির পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়।পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রকল্পের ভিতর দিয়ে যে ড্রেনটি তৈরি করা হয় সেটা দিয়েও পানি নিষ্কাশন হয় না। এলাকার মানুষের দাবি ছিলো মাথাভাঙ্গা খালের শেষাংশে সুইচগেট তৈরীর। যাতে করে আতাই নদীর সঙ্গে খালটির সংযোগ হয়। তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করছি আন্ডার গ্রাউন্ড পাইপের মাধ্যমে ময়ূর খালের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে ওই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের। এ ব্যাপারে একটা প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। প্রস্তাবনাটি অনুমোদন পেলে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।