খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

খননে অনিয়মের অভিযোগ, অবৈধ দখলদারদের কবলে কপোতাক্ষ

মোঃ মহিদুল ইসলাম, চৌগাছা

যশোরের চৌগাছাবাসী সহ কপোতাক্ষ পাড়ের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণের পথে। শুরু হয়েছে কপোতাক্ষ খনন, নদ পাড়ের জেলেরা জাল দড়ি নিয়ে নদে নামার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু খননকার্য দেখে হতাশ হয়েছেন এলাকাবাসী। অবৈধ দখলদারদের কবল হতে উদ্ধার হচ্ছে না নদের জমি, খননের দৈর্ঘ ও গভীরতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

অনেকে মন্তব্য করছেন এভাবে নদ খনন করা হলে কপোতাক্ষ আর নদ থাকবে না পরিনত হবে সরু খালে। সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ কোন ক্রমেই যেন দুর্নীতি গিলে খেতে না পারে সে জন্য সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

চৌগাছা উপজেলা সদরের বুক চিরে বয়ে গেছে মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের কপোতাক্ষ নদ। সুদুর চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গায় কপোতাক্ষের উৎপত্তিস্থল, এরপর সাপের মত আঁকা বাঁকা হয়ে চৌগাছা উপজেলাকে অঘোষিত ভাবে দু’ভাগে বিভক্ত করে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

এক সময়ের প্রমত্তা কপোতাক্ষ কালের পরিক্রমায় মরা খালে পরিনত হয়। কপোতাক্ষের করুন পরিনতি নিয়ে একাধিকবার দৈনিক লোকসমাজসহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়, টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। অবশেষে সেই মরা কপোতাক্ষকে খননের উদ্যোগ নিয়েছেন সরকার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর ব্রীজ সংলগ্ন হতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৭৯ কিলোমিটার নদ খনন হবে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। একাধিক প্রজেক্টের মাধ্যমে আগামী দুই বছরের মধ্যে খননকার্য শেষ করা হবে।

নির্ধারিত পরিমাপে নদকে গভীর করা হবে আর খননকৃত নদের আড় হবে ৩০ থেকে ৩৫ মিটার। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের শেষ সময়ে এসে পৌরসভার হুদাচৌগাছা মহল্লার নিচ থেকে নদ খনন কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি কারনে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। চলতি অর্থ বছরেও নদের পানি কমা মাত্রই শুরু হয় খননকার্য। কিন্তু যে ভাবে নদ খনন হচ্ছে তাতে নদ কি আদৌ কপোতাক্ষ থাকবে না কি সরু খালে পরিনত হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সর্বমহলে। অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতারও।

চলতি অর্থ বছরে উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের অংশ থেকে নদ খনন শুরু করে চৌগাছা পৌর এলাকা হয়ে পাশ্ববর্তী হাকিমপুর অভিমুখে চলছে খনন কাজ। বর্তমানে চৌগাছা বাজারের পাশে নদের অংশে চলছে খনন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নদের জমি দখলে রাখা ব্যক্তিদের নিকট থেকে সেভাবে উদ্ধার হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসি। পৌর এলাকারা বাবুঘাট থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো পর্যন্ত নদের জমি দখলে নিয়ে অনেকে আরাম আয়েশে আছেন। অভিযোগ খনন করা হচ্ছে নদ কিন্তু ওই জমি উদ্ধার হচ্ছেনা। কেন কিসের কারনে নদের জায়গা উদ্ধার হচ্ছে না সেই প্রশ্ন এখন সকলের মুখেমুখে।

গতকাল সরেজমিন নদের খনন কাজ দেখতে বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদে পানি রয়েছে পাশে শুকনা জমিতে এক সেন্টিমিটার বসিয়ে নদের তলদেশ থেকে কাদামাটি তুলে পাড়ে স্তুপ করা হচ্ছে। পানি থাকার কারনে সঠিক ভাবে খনন হচ্ছে কিনা সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নদের পাড়ের বাসিন্দারা।

তারা বলেন, পানির মধ্যে এক সেন্টিমিটার প্রথম যেখান থেকে মাটি তুলে নিয়ে আসছে দ্বিতীয়বার কি তার পাশ থেকে মাটি তোলা হচ্ছে? হচ্ছে না। কারণ অনুমান করে কখনও এ ধরনের খনন কাজ হয়না।

নদ পাড়ের বাসিন্দা হায়দার আলী, রাশিদুল ইসলাম, আজগর আলী, স্বপন কুমার, কৃষ্ণ কুমার, আব্দুস সামাদসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা তো সাধারণ মানুষ তেমন কিছুই বুঝি না, তবে মনে হচ্ছে নদ খননে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। এভাবে নদ খনন করা হলে খননের উদ্দেশ্য সফল হবেনা। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে খননকৃত মাটি আবারও নদে পড়ে ভরাট হবে তখন কপোতাক্ষ হবে সরু খাল। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

নদ খননের বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ইয়াকুব আলী খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে কপোতাক্ষ নদে খননের কাজ চলছে। চৌগাছার তাহেরপুর থেকে মনিরামপুরের খদ্দেরঘাট পর্যন্ত ৭৯ কিলোমিটার খননের আওতায় রয়েছে। নদের চওড়ায় গড়ে আমরা ৪২ মিটার পর্যন্ত খনন করছি। তিনি আরও বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিয়মমাফিক খনন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!