খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, দূর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত না হলেও ভাদ্র মাসের প্রথম দিকের সামান্য বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের ইটাগাছা পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পিছনের বস্তিসহ পশ্চিমপাশের এলাকার প্রায় দুই শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কমপক্ষে তিনটি পরিবারের ঘরের মধ্যেও পানি উঠেছে।

একইভাবে শহরের কামালনগর দক্ষিণপাড়া, পলাশপোল মেহেদীবাগ, রসুলপুর, কাটিয়া মাঠপাড়া, রথখোলা মুনজিতপুরসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শহরের ইটাগাছা পশ্চিমপাড়ার মফিজুল হাওলাদার ও সেফালী খাতুন জানান, গত কয়েকদিনের সামান্য বৃষ্টিপাতে তাদের ঘরের মধ্যে পানি থৈ থৈ করছে। যাওয়ার অন্য কোন জায়গা না থাকায় ঘরে চৌকির নিচে ইট দিয়ে উচু করে কোন রকমে সেখানে অবস্থান করছেন। তবে বৃষ্টি আরও হলে তাদের ঘর ছাড়তে হতে পারে।

জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবুল জানান, তার বাড়ি হতে ইটাগাছা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পিছনে বসবাসকারী প্রায় দুই শত পরিবার সম্পূর্ণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এলাকার অনেককে ঘর ছাড়তে হবে।

শহরের কামলনগর দক্ষিণপাড়ায় বসবাসকারী জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি এড. আল মাহামুদ পলাশ জানান, তার বাড়ির ঘরের মধ্যে প্রায় ১০ ইঞ্চি পানি। এলাকার প্রায় ৩০টি পরিবারের ঘরের মধ্যে পানি উঠেছে। এছাড়া অর্ধশত পরিবার সম্পূর্ণ পানিবন্দি অবস্থায় দিন পার করছে।

তিনি আরও বলেন, এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে জনৈক কামরুল ইসলাম, রজব আলী ও ছোট ময়না মাছের ঘের করেছেন। এর ফলে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না। যে কারণে পানি উপচে বাড়ি ঘরে ঢুকছে।

কামালনগর মধ্যপাড়ায় বসবাসকারী মানবাধিকার কর্মী এড. আজহারুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর বৃষ্টিপাতে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে লেকভিউর পাশে এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের একটি পথ ছিল। কিন্তু ইতিপূর্বে ওই পথটি বন্ধ করে দেওয়ায় বৃষ্টিপাত হলেই এলাকায় আরও বেশি করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত জানান, কাটিয়া মাঠপাড়া, মুনজিতপুরসহ বিভিন্ন নিচু এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথগুলো মাছ চাষিদের দখলে থাকায় প্রতিবছরই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাণসায়র খননের পরও তার কোন সুফল পৌরবাসী পায়নি।

সেলিম হোসেন জানান, ভাদ্রের সামান্য মৌসুমী বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেহেদীবাগে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার ফলে এসব এলাকায় বসতি ঘরবাড়িতে হাঁটু-পানি উঠে যাওয়ায় পানিবন্দী হয়েছে একাধিক পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, বিলে মংস্য ঘেরের পাশ দিয়ে ড্রেনেজ ও পৌর এলাকায় ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করায় বৃষ্টিপাত হলেই এসব এলাকায় কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আর জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দূর্ভোগে বসবাস করছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা করার জন্য এলাকাবাসি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানালেও আজ পর্যন্ত পৌরসভা কোনো নজর দেননি বলে এলাকাবাসি জানান।

জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য শিক্ষক শহীদুল ইসলাম জানান, অকালের সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা শহরের পূর্বাঞ্চল। বিশেষ করে পুরাতন সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসা পার হলেই আশাশুনি সড়কে দু’ধারে দেখা যায় জলাবদ্ধতার চিত্র। বাড়িঘরে ও যাতায়াতের পথে পানি উঠে গেছে। বিল রয়েছে ডুবে। ফসল ও বাড়ি ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার নারী, শিশু ও বয়স্করা পড়েছে চরম বিপাকে। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন তারা।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এই এলাকার পানি নিষ্কাশন হতো বেতনা নদীতে। নদী শাসনের ফলে বেতনা আজ অস্তিত্ব সংকটে। এছাড়া অপরিকল্পিত মাছের ঘের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। স্লুুইস গেটের শক্তি নেই পানি নিষ্কাশনের। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাবুডুবু খেতে হয় এই এলাকার মানুষের।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!