বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূযোর্গে ক্ষতিগ্রস্থের পরে খুলনার কয়রা উপজেলার নদীর বেড়িবাঁধে নতুনভাবে ২০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কারে সহায়তা চেয়ে জাইকা’র কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
গত ২০ ডিসেম্বর খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় পাউবো’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুলনার কয়রা উপজেলার পাউবোর ১৩-১৪/১ ও ১৩-১৪/২ নং পোল্ডারে ১৫৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০টি স্থান নতুনভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। সভায় উল্লেখ করা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জানানো হয়েছে। এছাড়া সভায় পাউবো কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। পাউবো সূত্রে নতুনভাবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এলাকা হচ্ছে হোগলা, গোবিন্দপুর, দশহালিয়া, লোকা, ঘড়িলাল, গোবরা, মেদেরচর, শাকবাড়িয়া প্রমুখ। এ সকল স্থানের ২০ থেকে ২৫ টি পয়েন্টে মেরামতের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর সহযোগীতায় কাজ করতে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পাউবো।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়রার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে কয়রা সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালী, হরিণখোলা, গোবরা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট ও ৪ নং কয়রা। মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া, গোবিন্দপুর, পূর্ব মঠবাড়ি ও লোকা। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ির শিকারীবাড়ি, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাজীপাড়া, গাববুনিয়া ও রত্নারঘেরি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের হরিহরপুর, কাটকাটা, চোরামুখা, জোড়শিং, মেদেরচর, আংটিহারা, খাসিটানা ও গড়িয়াবাড়ি এলাকা। এর মধ্যে কিছু এলাকায় কাজ চলমান রয়েছে। আর নতুন করে দশহালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত বাঁধ চরম খারাপ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় লোনা পানি প্রবেশ করতে পারে এবং জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে এলাকাবাসি জানায়।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খুলনা গেজেটকে বলেন, দশহালিয়া খেয়াঘাট থেকে হোগলা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। জাইকার সহযোগীতায় দ্রুতই কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদি।
এ প্রসঙ্গে কয়রার আমাদী শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মোঃ মশিউল আবেদীন জানান, গোবিন্দপুর, দশালিয়া, ও হোগলার কিছু অংশ নতুনকরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আর পূর্বের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পর্যায়ক্রমে মেরামত করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে ৪টি স্থানে প্রায় ৬ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। স্থানগুলো হলো গোয়ালখালী ৭০০ মিটার, গাববুনিয়া ২ হাজার ২০ মিটার, ২ নং কয়রায় ২৮০ মিটার ও হরিণখোলায় ১ হাজার ৭০০ মিটার। ইতিমধ্যে রত্নারঘেরি নামক স্থানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশ কুমার সরকার বলেন, নতুনভাবে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর মাধ্যমে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি বর্ষা মৌসুমের আগেই আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। স্থানগুলো হলো ঘড়িলাল, মেদের চর, হোগলা, লোকা জাপান সরকারের অর্থায়নে। দ্রুত মেরামতের মাধ্যমে জনগনকে আগত বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে আমরা সর্বাত্নক চেষ্টায় আছি।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ মে উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে। আইলার আঘাতে বাঁধ ভেঙ্গে লোনাপানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল খুলনার কয়রা অঞ্চল। তারপর দীর্ঘ ১১ বছর ধরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন কয়রাবাসী। কিন্তু সুফল মেলেনি। কোনোমতে টিকে থাকা বাঁধে গত বছরের ২০ মে পুনরায় আঘাত হানে আরও একটি প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কয়রা উপজেলায় ১২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার পুরোপুরি ভেঙে যায়। ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে উপজেলার ৫১ হাজার ঘর বাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে উপজেলার ৪৭ গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। সব মিলিয়ে কয়রার সর্বত্রই এখনও রয়ে গেছে আইলা ও আম্ফানে দংশনের চিহ্ন।
খুলনা গেজেট/ টি আই