মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টির পানিতে থৈথৈ করছে চারিদিক। এদিকে বৃষ্টিতে ভিজে নিজেদের মৎস্য ঘের বাঁচাতে ব্যস্ত সময় পার করছে মৎস্য চাষিরা। কেউ রাস্তায় মাটি দিয়ে রাস্তা উঁচু করছে, কেউ বা নেট জাল দিয়ে মৎস্য ঘের রক্ষা করতে ব্যস্ত রয়েছে। এমনই চিত্র খুলনার কয়রা উপজেলায়।
জানা গেছে, শ্রাবণের টানা বৃষ্টিতে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। ডুবেছে বসতভিটাসহ ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের। গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কয়রার জনজীবন। জলাবদ্ধতায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। নেমে এসেছে দুর্ভোগ।বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বীজতলা, ফসলের মাঠ, পুকুর, রাস্তাঘাট ও বাড়ির আঙিনা তলিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ।স্থানীয়রা কোনোমতে বাঁধ মেরামত করে জোয়ারের পানি আটকে দিলেও শ্রাবণ মাসের টানা বৃষ্টিতে খাল-বিল, পুকুর ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ নিয়ে বন্যা আতঙ্কে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষেরা।
এ উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের মৎস্য চাষি হরষিত মন্ডল বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই চলছিলো আমার সংসার। আমার উপার্জনের উৎস মৎস্য ঘের। কিন্তু দুইদিন ধরে চলা বৃষ্টিতে সব ভেসে যাওয়ার উপক্রম। তাই সকাল থেকে ঘেরের রাস্তায় নেটজাল দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, জমির মালিকের কাছ থেকে বছরে বিঘা প্রতি আট হাজার টাকা লিজ নিয়ে গত বছরের শুরুতে মাসে ৩০ হাজার টাকার চিংড়ী পোনা চাষ শুরু করি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সেগুলো সব শেষ হয়ে গেছে। গত ২৬ মে ঝড়ের দিন দুপুরের দিকে কয়রা নদীর মঠের কোনার বাঁধ ভেঙ্গে মূহুর্তের মধ্য আমার ঘের ভেসে যায়। আমরা সকলে স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সম্ভব হই। পানি নেমে গেলে আবার মৎস্য ঘের জেগে ওঠে। পুনরায় আবারো মাছ চাষে নেমে পড়ি। কিন্তু আমার কপালে সহ্য হলো না। আষাঢ়ের ভারী বৃষ্টির পর আবারও শ্রাবণের দুইদিনের টানা বৃষ্টিতে সব ভেসে যেতে বসেছে। বৃষ্টি থামছে না। বৃষ্টি থেমে গেলে হয়তো ঘেরটি বাঁচাতে পারতাম।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, দুর্ভোগ যেন কোনো অবস্থাতে পিছু ছাড়ছে না কয়রার মানুষের। কখনও নোনা পানির তোড়ে আবার কখনও অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে কয়রা সদর ইউনিয়নে অতি বর্ষণের ফলে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে চরম পর্যায়ে জনভোগান্তির তৈরি হয়েছে। পুরো ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিশাল এ এলাকার পানি নিষ্কাশন কিছু সংখ্যক স্লুইসগেট দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, কয়রায় শুষ্ক মৌসুমে নেই সেচ ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে নেই পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ধসে যাওয়ার সাড়ে তিন বছরেও নির্মাণ হয়নি কয়রা সদরের গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন স্লুইসগেট। পানি নিষ্কাশনের খালগুলো অবৈধ দখলদার আর ইজারাদারা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ ও নেট-পাটা দিয়ে পানির প্রবাহে বাঁধাসৃষ্টি করছে। দ্রুত ওয়ার্ড ভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগের দাবি জানান কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন।
খুলনা গেজেট/এনএম