ইরানে নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, তেহরানের অথিতিভবনে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন হানিয়া।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র নয় পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণেই নিহত হয়েছেন হামাসের শীর্ষনেতা।
মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ কর্মকর্তার সূত্র দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের তদন্ত বলছে, হানিয়া ইরানে গেলে তেহরানে যেখানে থাকতেন ওই সুরক্ষিত কমপ্লেক্সে লুকানো একটি বিস্ফোরক ডিভাইস রেখেছিল ইসরাইলি গুপ্তহত্যাকারী। তা রাখা হয় অন্তত দুই মাস আগে।
তেহরানের অভিজাত এলাকায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইজিআরসি) চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল তা পরিষ্কার নয়। তবে এরপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য দাবি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ কর্মকর্তার এ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছে।
ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করলে শুরুতেই সেটা আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির কারণে বাধাগ্রস্থ হতো। তাই সে পথে হাঁটেনি ইসরাইল। তাই নিখুঁত পর্যবেক্ষণ, নজরদারির মাধ্যমে হানিয়ার আবাসস্থলে আগে থেকেই পুঁতে রাখা বিস্ফোরকের মাধ্যমে খুনের পরিকল্পনা আঁটে ইসরাইলি গোয়েন্দারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মধ্যপ্রাচ্যের ওই পাঁচজন কর্মকর্তা বলেছেন, অথিতিভবনের ওই কক্ষে হানিয়ার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর বিস্ফোরকটি দূর থেকে বিস্ফোরণ করা হয়েছিল। বিস্ফোরণে ভবনটি কেঁপে ওঠে, কিছু জানালা ভেঙে যায় এবং ভবনের প্রাচীরের আংশিক ভেঙে পড়ে।
বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন দাবি করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হত্যার ষড়যন্ত্রের কোনো আগাম তথ্য পায়নি৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের ওই পাঁচ কর্মকর্তার মতে, ইসরাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা সরকারকে এই অভিযানের বিস্তারিত বিষয়ে অবহিত করেছেন আগেই।
হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধারণা করা হয়, ইসরাইল ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হানিয়াকে হত্যা করেছে, যেটা সম্ভবত ড্রোন বা বিমান থেকে ছোড়া হয়েছে। যেভাবে ইসরাইল এপ্রিল মাসে ইস্ফাহানের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল।
তবে ইস্ফাহানের মতো তেহরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকি নেওয়ার কথা নয় ইসরাইলের। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে রাজধানীর সবচেয়ে সুরক্ষিত ভবনে এমন বিমান হামলা চালানো কঠিন।
ইরানের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হানিয়ার আবাসস্থলের পাশেই ছিলেন ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ আল-নাখালাহ। বিস্ফোরণটা এতো নির্ভুল ছিল যে, জিয়াদের কক্ষ তেমন খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। এতে বোঝা যায়, হানিয়াকে লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ছিল ইসরাইলি গোয়েন্দাদের।
এই সময় তেহরানে অবস্থান করছিলেন হামাসের ডেপুটি কমান্ডার খলিল আল-হাইয়া। হানিয়ার কক্ষে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তিনি তার সহকর্মীর নিথর লাশ দেখেন। কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইন চিফ ইসমাইল ঘানি মধ্যরাতে এই হতবাক করা খবরটি জানান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে।
হানিয়ার মৃত্যুর চার ঘণ্টা পর ইরানের বিপ্লবী গার্ড এক বিবৃতি জারি করে নিশ্চিত করে। সকাল ৭টার মধ্যে খামেনি ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যদের জরুরী বৈঠকের জন্য তার কম্পাউন্ডে ডাকেন। যেখানে তিনি প্রতিশোধ হিসাবে ইসরাইলে সরাসরি আঘাত করার আদেশ জারি করেন।
ইরানের কর্মকর্তারা এবং হামাস বলছে, হানিয়ার হত্যার জন্য ইসরাইল দায়ী। গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য চলমান আলোচনাকে স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে তারা। হানিয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনায় গোষ্ঠীটির একজন শীর্ষ আলোচক ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আরেকটি ঢেউ তুলতে পারে।
খুলনা গেজেট/এনএম