খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে
এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম সিভিল সার্জনের

ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ফ্রিজে ওষুধ-সার্জিক্যাল উপকরণের পাশে খাদ্যসামগ্রী !

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ফ্রিজে থাকবে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা ও সার্জিক্যাল উপকরণসমূহ। কিন্তু খুলনার উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর ফ্রিজ গৃহস্থলীর মতোই্ ব্যবহৃত হচ্ছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও স্যার্জিক্যাল উপকরণের পাশাপাশি অধিকাংশ ক্লিনিক/ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ব্যবহৃত ফ্রিজে রাখা হচ্ছে- সফটড্রিংস কোকোকোলা, খাদ্য সামগ্রী, তরিতরকারি। এমনকি কোরবানীর গোসতও রাখছেন। গত তিনদিনে বটিয়াঘাটা, ফুলতলা, দিঘলিয়া এবং নগরীর কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার পরিদর্শণে এমন সব উদ্ভট দৃশ্য দেখেছেন খুলনা সিভিল সার্জন মোঃ সুজাত আহমেদ।
এসব ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার নুন্যতম পরিবেশ নেই। ল্যাব ফিজিশিয়ান, প্যাথলজিষ্ট ও টেকনিক্যাল জ্ঞান সম্পন্ন কর্মী ছাড়াই চলছে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলো। বৈধ কাগজপত্রগুলোও তারা করে না নবায়ন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান নিশ্চিত করতে না পারলে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সিভিল সার্জন।

প্রসঙ্গত্ব, গত ১৮ জুলাই দুপুর পৌনে ২টায় “নেই অভিযান/ খুলনায় নবায়ন ছাড়াই চলছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার” শিরোনামে খুলনা গেজেটে তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্র জানান, বুধবার (৫ আগস্ট) সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি টীম নগরীর সোনাডাঙ্গা ও বয়রার পাঁচটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেন। এসময় মেয়াদ উত্তীর্ণ রিয়েজেন্ট রেখে দেয়া, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রিয়েজেন্ট সংরক্ষণ না করা, সঠিকভাবে বর্জ্য অপসারণ না করা, প্যাথলজিষ্ট ছাড়াই প্যাথলজির ডকুমেন্ট দিয়ে দেয়াসহ নানা বিষয়ে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়।
তার আগেরদিন মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) ফুলতলা ও দিঘলিয়ার ক্লিনিক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে অনুরুপ বেহাল অবস্থা দেখেছেন টীমের সদস্যরা।
এরআগে, ৩ আগস্ট বটিয়াঘাটা উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানা অনিয়ম প্রত্যক্ষ করেন সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ। চিকিৎসা সেবার নূন্যতম মান দেখতে পাননি সেখানে। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিভিন্ন অনিয়মের পাশাপাশি কাগজপত্রে ত্রুটি খুঁজে পান পরিদর্শকরা।

খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সুজাত আহমেদ বলেন, দিঘলিয়া ও ফুলতলা উপজেলার কোনো ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করেনি। এরআগে, বটিয়াঘাটায় তিনটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছি- সেখানেরও একই অবস্থা। খুলনা মহানগরীর ৮-১০টি ক্লিনিক/ডায়াগনষ্টিক পরিদর্শন করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের একটিরও বৈধ কাগজপত্র আপডেট নেই।
অধিকাংশ ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবার মান মানসম্মত নয়। খুলনার শিবসা ক্লিনিক, খানজাহান আলী ক্লিনিক এধরণের ক্লিনিকগুলোতে সেবার বালাই নেই। চিকিৎসার পরিবেশ আমি দেখলাম না। বটিয়াঘাটার সোনালী ক্লিনিক; সেখানে চিকিৎসক বা নার্স কিছুই নেই। ফুলতলার লিন্ডা ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ নেই। উপজেলা পর্যায়ের ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে ল্যাব ফিজিশিয়ান, প্যাথলজিষ্ট বা টেকনিক্যাল জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি আমি পাইনি। অথচ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলো সেখানে চলাচ্ছে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ের এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্সসহ বৈধ সকল কাগজপত্র নবায়ন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিশ্চিতকরণে এক সপ্তাহের সময় দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে বিধি মোতাবেক সবকিছু ঠিক না পেলে সে সব ক্লিনিক/ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়ে, আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নিবেন বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি আরও বলেছেন, খুলনার নয়টি উপজেলায় সমস্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো আমি পরিদর্শন করবো। সরেজমিন পরিদর্শনের পর জনগনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যা করা প্রয়োজন আমি তাই করবো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, খুলনার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার । যার অধিকাংশই দীর্ঘদিন থেকে নবায়ন করা হয়নি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা হচ্ছে। ইতিপূর্বে অনেক প্রতিষ্ঠানে ভূয়া ডাক্তার ও ভুল রিপোর্ট তৈরীর অভিযোগে জরিমানা করা হলেও পরবর্তীতে তা ফের দেদারছে পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া দক্ষ ডাক্তার না থাকা এবং ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা তো আছেই। এমন অবস্থায় মান সম্মত ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার পরিচালনা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানান, শুধুমাত্র মহানগরীতেই ৭৮টি ক্লিনিক এবং ৮২টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারসহ ১৬০টি নামমাত্র স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে নবায়ন আছে সর্বোচ্চ ২০টি প্রতিষ্ঠানের।

খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ মনজুরুল মুরশিদ জানান, শুধুমাত্র খুলনা মহানগরীতে ১৬০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০টি প্রতিষ্ঠানের নবায়ন আছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের খুলনার সভাপতি ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান জানান, ২০১৮ সাল থেকে নবায়ন ফি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিষয়টি তৎকালীন সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছিল। তিনি ফি কমানোর আশ্বাস দিলেও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নবায়নে অফিসিয়ালী আভ্যন্তরীণ কিছু জটিলতা রয়েছে। তা মিডিয়ায় ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান নবায়নের আবেদন করা হলেও বিভিন্ন কারণে তার কোন আপডেট চায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে তিনি তার এসোসিয়েশনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সকল নিয়ম কানুন মেনে নিয়ে নবায়ন কার্যক্রম করার আহ্বান জানিয়েছেন।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!