খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

ক্রীড়া জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন খুলনার মিলজার হোসেন

একরামুল হোসেন লিপু

মোঃ মিলজার হোসেন। এক সময়ের দেশের ক্রীড়া জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশের সুনাম এবং সম্মান বয়ে আনা একজন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদ ছিলেন। সাফ গেমস, এশিয়ান গেমস, ওয়ার্ল্ড এ্যাথলেটিক্সসহ ২০ টি’র বেশি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। ৮০০ মিটার দৌঁড়ে তার গড়া রেকর্ড ৩৮ বছর পর এখনও কেউ ভাঙতে পারেনি। আর ৪০০ মিটার স্পিন্টারে তার গড়া রেকর্ড ৩২ বছর পর্যন্ত অক্ষুন্ন ছিল।

১৯৮৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান জুনিয়র অনূর্ধ্ব ১৮ অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মিলজার হোসেনের ৮০০ মিটার দৌঁড়ে রৌপ্য পদক এবং ৪০০ মিটার দৌঁড়ে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন এটিই বাংলাদেশের কোন আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্সে সেরা সাফল্য। দীর্ঘ খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি এক ডজনরও বেশি স্বর্ণ পদকসহ অসংখ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পদক অর্জন করেছেন। জাতীয় ক্রীড়া পদক পেয়েছেন। স্পোর্টস ম্যান অফ দা ইয়ার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন, বিজেএমসি, ক্রীড়া লেখক ও ক্রীড়া সাংবাদিক পুরস্কার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা থেকে একাধিক পুরস্কার এবং সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ২০০২ সালে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৭তম সাফ গেমসের মশাল তিনি প্রজ্জল করেন।

খুলনা গেজেটের এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মোঃ মিলজার হোসেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কৃতি এ্যাথলেট হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন।

মিলজার হোসেনের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায়। এ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম দিঘলিয়া। শিক্ষা, দীক্ষা এবং খেলাধুলার দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ একটি গ্রাম। এ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী একটি ক্লাব ইয়ং মেনস এসোসিয়েশন। ক্লাবের ছিল সুবিশাল একটি মাঠ। যেখানে সারা বছর খেলাধুলা লেগে থাকত। এই মাঠে প্র্যাকটিস করে অনেকেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই মিলজার হোসেন মাঠে স্পোর্টসের প্র্যাকটিস দেখতেন। বিশেষ করে এ গ্রামের আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদ ছিলেন মরহুম খান জহুরুল হক, তার ভাই মরহুম খান ফজলুল হক। তখন উনাদের কৃতিত্ব দেখে স্পোর্টসের প্রতি উৎসাহিত হন মিলজার হোসেন। প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর পড়াশুনার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলার প্রাকটিস শুরু করলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সাফল্য দেখাতে শুরু করলেন। ১৯৮০ সালে জাতীয় আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ত্রিপল জাম্পে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। জাতীয় পর্যায়ে এ সাফল্যের পর বিজেএমসি’র ব্যাকআপ পেতে শুরু করেন। এরপর থেকে মিলজার হোসেনকে আর পিঁছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি। একের পর এক সাফল্য তার হাতের মুঠোয় ধরা দিয়েছে।

১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে অংশ নিয়ে তিনি ৪০০ মিটার দৌঁড়ে রৌপ্য পদক লাভ পান। এরপর ১৯৮৬ সালে এশিয়ান যুব এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ৮০০ মিটারে রৌপ্য এবং ৪০০ মিটারে ব্রোঞ্জ পদক পান। একই বছর কোরিয়ার রাজধানীর সিউলে অনুষ্ঠিত ১০ম এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার দৌঁড়ে চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে এটাই ছিল দেশের সর্বোচ্চ অর্জন। ১৯৮৬ সালে যুব এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ৮০০ মিটার এবং ৪০০ মিটার দৌঁড়ে তার গড়া রেকর্ড এখনও পর্যন্ত কেউ অর্জন করতে পারেননি। এটাই ছিল দেশের সর্বোচ্চ অর্জন। এছাড়াও তিনি জাতীয় পর্যায়ে ৪× ৪০০ রিলেরেসে জাতীয় রেকর্ড তৈরি করেন। ১৯৮৯ সালে ইসলামী সলভেনডারি গেমসে ৮০০ মিটারে রৌপ্য পদক, ৪০০ মিটারে ব্রোঞ্জ পদক এবং ৪×৪০০ মিটার রিলেরেসে ব্রঞ্চ পদক পান।

১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ছিলেন এ অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারী প্রথম কোন এ্যাথলেট। ১৯৯০ সালে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।

ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৬ সালে ক্রীড়া লেখক সমিতি ও জার্নাল স্পোর্টস এ্যাথলেটিক্সে তাকে পদক এবং সম্মাননা প্রদান করেন। ১৯৯০ সালে তাকে স্পোর্টসম্যান অফ দা ইয়ার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ১৯৮৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার এবং ২০০৪ সালে তাকে জাতীয় ক্রীড়া পদক প্রদান করা হয়।

তিনি জাতীয় পর্যায়ে একজন দক্ষ ক্রীড়া প্রশিক্ষক হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অসংখ্য কৃতি এ্যাথলেট তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মিলজার হোসেন বিজিএমসি’র আওতাধীন চট্টগ্রাম আমিন জুট মিলের উপ-মহাব্যবস্থাপক হিসেবে সততা দক্ষতা এবং যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি জাতীয় অ্যাথলেটিক্স এর বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। দেশের দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরিতেও অবদান রাখছেন।

মিলজার হোসেনের সহধর্মিনী রেহেনা পারভীনও একসময়ের দেশসেরা জাতীয় ক্রীড়াবিদ। দ্রুততম মানবী ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে মোঃ মিলজার হোসেন এক ছেলে মাসারিফ হোসেন এবং কন্যা মোহনা হোসেনের গর্বিত পিতা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!