‘আমার লবিং নেই, আমার সাথে যা হচ্ছে তা নিয়ে কথা বলার কেউ নেই’- সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করে হইচই ফেলে দিয়েছেন জাতীয় দলের পেসার আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দলে জায়গা না পাওয়া রাহী শোকজের মুখে দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন, তার কথা গণমাধ্যমে ঠিকভাবে আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে বেফাঁস মন্তব্যের কারণে বিপাকে পড়তে হয়েছিল মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকেও। রাহী-সাইফউদ্দিনদের এসব বেফাঁস কথা ঠেকাতে এবার উদ্যোগী হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বিসিবির অধীনে ইংল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়ে আসার কয়েকদিন পরই সাইফউদ্দিন দাবি করেছিলেন, দলের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ তার খোঁজখবর রাখেননি। সেই ইস্যুতে বোর্ডে কারণ দর্শানোর পরপরই আবার সাংবাদিকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে বসেন।
সেই ইস্যু পুরনো হলেও রাহী আগুনে ঘি ঢেলেছেন টিম ম্যানেজমেন্ট ও দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে। এ ঘটনায় বোর্ডকে পড়তে হয়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। এসব ক্ষেত্রে ক্রিকেটাররাও স্বীকার করছেন, তারা যা বলতে চাইছেন তা ঠিক নয়, কিংবা তাদের মন্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলেও দাবি করছেন কখনও কখনও।
তবে ক্রিকেটারদের নিয়ে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে অভিনব উদ্যোগ নিচ্ছে বিসিবির মিডিয়া কমিটি। সব ক্রিকেটারকে নিয়ে বসে মিডিয়া কমিটি গণমাধ্যম সামলানোর ‘টোটকা’ দিবে নিকট ভবিষ্যতে।
বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু বলেন, ‘চুক্তির ক্রিকেটারদের চিন্তাভাবনা করে কথা বলা উচিৎ। রাহী যে কথা বলেছে, বা সাম্প্রতিক সময়ে এমন যা শুনেছেন সেগুলো আমাদের নজরে আছে। অপারেশন্স ও ডিসিপ্লিনারি কমিটি সেটা দেখবে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের মত বড় ইস্যু কি না অবশ্যই খতিয়ে দেখবে।’
তরুণ বা অপেক্ষাকৃত নতুন ক্রিকেটারদের মধ্যেই বেফাঁস মন্তব্যের নজির বেশি। বিসিবির এই পরিচালক মনে করেন, ক্রিকেটাররা এ ব্যাপারে যথেষ্ট অবগত না থাকার কারণেই এমন দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে।
টিটু বলেন, ‘অনেক খেলোয়াড় চুক্তিতে নতুন। কোড অব কন্ডাক্টের বিষয়গুলো তাদের ভালোমত বুঝিয়ে বলার সুযোগ হয়ত হয় না। তার আগেই হয়ত তারা কথা বলে ফেলে। আমরা মিডিয়া কমিটির পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করছি- খেলোয়াড়দের সাথে বসে ব্রিফিংয়ের মত করা। মিডিয়ার সামনে নিজেদের কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে সেটা অবহিত করলে তারাও বুঝবে।’
সাইফউদ্দিন যেমন তার প্রতি বোর্ডের অবহেলার কথা বোঝাতে চাননি, তেমনি রাহীও বোঝাতে চাননি লবিংয়ের মত কোনো বিষয়। গণমাধ্যমের সামনে তারা যা বলেন, খবর লেখা হয় তা নিয়েই। কারণ গণমাধ্যমকর্মীদের নেই ক্রিকেটারদের মন পড়ার ক্ষমতা। এজন্য ক্রিকেটাররা যেন ঠিকঠাকভাবে তাদের অনুভূতি বা মনের কথা তুলে ধরতে পারেন, সে ব্যাপারে তাদেরকে ব্রিফ করবে মিডিয়া কমিটি।
টিটু জানান, ‘হয়ত আক্ষরিক অর্থে সেটা না বোঝালেও মুখ থেকে একটা কথা চলে আসে যা এমন অর্থ হয়ে দাঁড়ায় যেটা সে বলতে চায়নি। কথার সুরে সুরে অর্থ অনেক সময় বদলে যায়। এসব বিষয়ে বসে আলাপ করব, যেন যা-ই বলে বুঝে বলে এবং ভুল কোনো বার্তা না যায়।’
প্রসঙ্গত, সাইফউদ্দিন বা রাহী কেউই এখন বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই। ম্যাচ খেলার সুযোগ হচ্ছিল না বলে রাহীকে বাদ দেওয়া হয় টেস্ট চুক্তি থেকে। সাইফউদ্দিন সীমিত ওভারের দুই ফরম্যাটের চুক্তি থেকে বাদ পড়েন ইঞ্জুরির কারণে। কাকতালীয়ভাবে নিজেদের হতাশা নিয়ে কথা বলে এই দুই ক্রিকেটারই বাঁধিয়ে বসেছেন হইচই। সাইফউদ্দিন অবশ্য বোর্ডের ব্যাপারে বলেছিলেন চুক্তি থেকে বাদ পড়ার আগে।
খুলনা গেজেট/ এস আই