খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

ক্রিকেটপ্রেমী আরমানের এগিয়ে চলা

মোহাম্মদ মিলন

দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে একঝাঁক নক্ষত্র উঠে এসেছেন খুলনা অঞ্চল থেকেই। হাবিবুল বাশার, মাশরাফি বিন মুর্তজা, আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, এনামুল হক, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদীসহ অসংখ্য ক্রিকেটার দেশের ক্রিকেট অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র।

খুলনা বিভাগ যেন ক্রিকেটার তৈরির উর্বর ক্ষেত্র। সেই সঙ্গে ক্রিকেটের প্রতি আবেগ ও ভালোবাসার কমতি নেই এখানে। সেই খুলনাতেই ব্যতিক্রমী এক ক্রিকেট খেলোয়াড় আরমান হোসেন। দুই হাতের কবজি নেই, তাতে কী? তা দমিয়ে রাখতে পারেনি ক্রিকেট-পাগল আরমানকে। ক্রিকেটের প্রতি রয়েছে তার আবেগ ও ভালোবাসা। কবজিবিহীন দুই হাতে স্বাভাবিক খেলোয়াড়দের মতোই ব্যাট ও বল হাতে উজ্জীবিত তিনি। ফিল্ডিংয়েও নেই চেষ্টার ত্রুটি। অদম্য শক্তিতে ক্রিকেট মাঠে তার এগিয়ে চলা সবার চেয়ে আলাদা।

খালিশপুর বঙ্গবাসী স্কুলমাঠের ক্রিকেট খেলা যেন আরমানকে নিয়েই শুরু আর তাকে নিয়েই শেষ। একমাত্র মনোবলের কারণে অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে ক্রিকেট খেলছেন আরমান। খেলার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ তার। সুযোগ পেলে হয়তো ভালো ক্রিকেটারও হতে পারতেন। কিন্তু দারিদ্র্য আরমানের সেই সম্ভাবনার অন্তরায়। অসচ্ছল পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি এখন তার বাবা শুকুর আলী। তার বাবা ছোট একটি মুদি দোকান চালিয়ে ছয় সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের ভরণপোষণ চালান। বাকি সময় আরমান বাবাকেও সময় দেন। অল্প বয়সেই পরিবারের হাল ধরতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে যোগ দেন আরমান। কিন্তু ২০১৫ সালের ১৫ মে একটি দুর্ঘটনায় তার দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কাটা সেই হাত দিয়েই ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কবজিবিহীন হাত দমিয়ে রাখতে পারেনি ক্রিকেট-প্রেমী আরমানকে। একটু সহযোগিতা পেলে হয়তো ভালো কিছু করতে পারবেন, সেই আশা এখনো রয়েছে আরমানের। সদা হাস্যোজ্জ্বল আরমান স্থানীয় অনির্বাণ ক্লাবের সদস্য। তিনি সবার ভালোবাসা ও আস্তারও ব্যক্তি।
সরেজমিন দেখা যায়, খালিশপুর বঙ্গবাসী স্কুলমাঠে তিনি অন্যদের সঙ্গে খেলছেন। অন্যদের চেয়েও খেলার প্রতি তার প্রচণ্ড পরিশ্রম। কখনো বল করছেন। ব্যাটসম্যান তার বল মারছেন। দূর থেকে সতীর্থরা বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠাচ্ছেন। সেই বল তিনি কবজিবিহীন হাত দুটো দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই লুফে নিচ্ছেন। আর কবজিবিহীন দুই হাত দিয়ে চেপে ব্যাট ধরে খেলছেন, মারছেন দৃষ্টিনন্দন সব শট। বোঝাই যায় না তিনি অস্বাভাবিক।

আরমান হোসেন জানান, ২০১৫ সালের ১৫ মে আরএফএল কোম্পানিতে কাজ করাকালীন দুর্ঘটনায় তার দুই হাতের কবিজ নষ্ট হয়ে যায়। পরে চিকিৎসার মাধ্যমে কবজি কাটা পড়ে। খুলনা মহানগরের খালিশপুর থানায় ছয় সদস্যবিশিষ্ট দরিদ্র পরিবারে তিনি কষ্টে দিন যাপন করেন। আরমান বলেন, আমার খেলার প্রতি আগ্রহ রয়েছে। সবাইকে নিয়ে খেলাধুলা করি। কেউ আমাকে অবহেলা করেন না। আমার বাবার একটি ছোট মুদি দোকান রয়েছে। সেই দোকানের আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে। বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে দোকানের কাজে সহায়তা করি। পাশাপাশি আমার প্রতিবেশী ও বন্ধুরা মিলেমিশে খেলাধুলা করি। সবাই আমাকে বোলিং ও ব্যাটিং করতে দেয়। আমার পরিবার অসচ্ছল। আমি একটু সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলতে পারব ইনশা আল্লাহ।

খালিশপুর অনির্বাণ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান জনি জানান, আরমানের খেলাধুলার প্রতি অনেক আগ্রহ। ছোট থেকেই তিনি খেলাধুলা করেন। তিনি সব সময় মাঠে থাকেন। খেলার পাশাপাশি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে আম্পায়ারের দায়িত্বও পালন করেন।কোনো সংস্থা আরমানকে যদি একটু দেখভাল করে অথবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে, তাহলে তার জন্য এবং তার পরিবারের জন্য ভালো হবে। আরমানের দুই হাত না থাকার পরেও সে চেষ্টা করে খেলাধুলার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে। খেলাধুলার প্রতি তার গভীর মনোযোগ রয়েছে।

খালিশপুর অনির্বাণ ক্লাবের সভাপতি মানিক মোল্লা বলেন, দুর্ঘটনায় আরমানের হাত কাটা পড়েছে। তবুও আরমান মাঠে প্রতিনিয়ত খেলাধুলা করেন। তাকে যদি কেউ সহযোগিতা করত, তাহলে তিনি খেলাধুলায় আরও উন্নতি করতে পারতেন বলে জানান তিনি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!